ব্রহ্মগাছা যুদ্ধ (রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ)
ব্রহ্মগাছা যুদ্ধ (রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৭ই অক্টোবর। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন ব্রহ্মগাছা। ব্রহ্মগাছা গ্রামসহ মোট ২৪টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়নটি গঠিত। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে পলাশডাঙ্গা যুবশিবির-এর মুক্তিযোদ্ধদের যুদ্ধ হয়। এতে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী এ স্থান ছেড়ে চলে যায়।
জুন মাসে ভদ্রঘাটের যুদ্ধের পর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা ভদ্রঘাট ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করেন। তখন ছিল বর্ষাকাল। তাই তাঁরা প্রধানত নৌকায় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করেন। ব্রহ্মগাছা তুলনামূলক নিরিবিলি গ্রাম হওয়ায় পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয়ার জন্য সেখানে যান। তাঁরা জোলাগাতী বগাদহে তাঁদের নৌকাগুলো রেখে ১ কিলোমিটারের মতো দূরে ব্রহ্মগাছা গ্রামে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধারা যখন ব্রহ্মগাছা বাজারে অবস্থান নেন তখন তারা জানতে পারেন যে, কয়েকজন রাজাকার বাজারে অবস্থান করছে। তাঁরা রেকি পাঠিয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত হন। মুক্তিযোদ্ধারা ১১ জন করে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বাজারে গিয়ে রাজাকারদের আটক করেন। একজন রাজাকার পালিয়ে গিয়ে রাতেই সিরাজগঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্রহ্মগাছায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর দেয়। পরদিন ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী ৪-৫টি গাড়িতে করে এসে ব্রহ্মগাছা গ্রাম ঘিরে ফেলে। আযানের সময় গ্রামের একজন মুরুব্বী মুক্তিযোদ্ধাদের এ খবর দেন। খবর পেয়ে যুদ্ধের প্রাথমিক পরিকল্পনা করতে আবদুল লতিফ মির্জা, সোহরাব আলী সরকার, লুৎফর রহমান অরুণ এবং মোজাহারুল ইসলাম একত্রিত হন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন মর্টারসহ মোজাহারুল ইসলাম এক প্লাটুন, লুৎফর রহমান অরুণ আরেকটি প্লাটুন এবং গার্ড কমান্ডার হোসেন আলী এক সেকশন যোদ্ধা নিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেবেন। সোহরাব আলী সরকার ও ১নং কোম্পানি কমান্ডার মো. সামাদ তাঁদের কোম্পানি নিয়ে পরপর যোগ দেবেন। ঊর্ধ্বতন কমান্ডারের নির্দেশে পরবর্তী কার্যক্রম ঠিক করা হবে। সিদ্ধান্ত শেষে সবাই দ্রুত পজিশনে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ছিল ব্ৰহ্মগাছা ইছামতি নদীর পশ্চিম দিকে, আর পাকিস্তানি বাহিনী ছিল নদীর পূর্বদিকে। গার্ড কমান্ডার হোসেন আলী পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ করে ফায়ার শুরু করেন। পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে যুদ্ধ শুরু হয়। তাদের সঙ্গে ছিল ৪২টির মতো নৌকা। সকাল ১১টা পর্যন্ত একটানা এবং এরপর প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে-থেমে যুদ্ধ হয়। উত্তরদিকে চরব্রহ্মগাছা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য একটি দলও পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ করে গুলি চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পজিশন ছেড়ে চলে যায়। এ-যুদ্ধে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা ব্রহ্মগাছা থেকে নওগাঁয় চলে যান। আখতার হোসেন মণ্ডল, আলী ইমাম দুলু, মোজাম্মেল হক, খোরশেদ আলম, আখতার প্রামাণিক, খলিলুর রহমান, জাকির হোসেন ও আবদুর রহিমসহ পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের ৬টি প্লাটুনের ২০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। [সুস্মিতা রানী দাস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড