You dont have javascript enabled! Please enable it!

বোনারপাড়া রেলওয়ে লোকোসেড গণহত্যা (সাঘাটা, গাইবান্ধা)

বোনারপাড়া রেলওয়ে লোকোসেড গণহত্যা (সাঘাটা, গাইবান্ধা) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর। এতে ১১ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
তৎকালীন গাইবান্ধা মহকুমার অন্তর্গত সাঘাটা থানা সদর ছিল বোনারপাড়ায়। এখানে একটি রেলওয়ে জংশন ছিল। রেলওয়ে পুলিশের থানা ও রাজধানী ঢাকা থেকে রেলপথে বাহাদুরাবাদ-তিস্তামুখ হয়ে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ছিল এটি এ জংশন দিয়ে উত্তরে দিনাজপুর ও দক্ষিণে বগুড়া- রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল করত। সে আমলে রেলপথই ছিল যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। রেলওয়ে জংশন হওয়ার সুবাদে লোকোসেড, কয়লার ডিপো, পানির পাম্প, ক্যারেজ ডিপোসহ রেলওয়ের সকল স্থাপনা ছিল এখানে। জংশন স্টেশন হওয়ায় বোনারপাড়ায় বিপুল সংখ্যক অবাঙালি রেলওয়েতে চাকরি করত। তারা শুরু থেকেই ছিল বাঙালি বিদ্বেষী। ২৩শে এপ্রিল বোনারপাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকেই এর আশপাশের এলাকার মানুষজন বাড়িঘর ও সহায়-সম্পদ ফেলে নিরাপদ এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়। বোনারপাড়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের কর্তৃক হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়।
বোনারপাড়া এলাকার মানুষের কাছে ১৭ই নভেম্বর ছিল চরম বিভিষীকাময় ও হৃদয়বিদারক একটি দিন। এদিন সকালে পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালিরা শিমুলতাইড় গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় ঢুকে ব্যাপক মারপিট, ধরপাকড়, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ১৩ জন গ্রামবাসীকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে মারতে-মারতে রেলওয়ের এন এ খান ইনস্টিটিউট সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১১ জনকে ধরে নিয়ে যায়। তারা হলেন- মজিবর সরকার (পিতা হাজী আকালু), মোহাম্মদ (পিতা আলী শেখ), মনসুর আলী (পিতা রিয়াজ উদ্দিন), আতিয়ার আলী (পিতা আ. মজিদ), আয়েজ উদ্দিন (পিতা সিরাজউদ্দিন), মহির উদ্দিন (পিতা আমান উদ্দিন), ছহির উদ্দিন (পিতা আসান উদ্দিন), আব্বাছ উদ্দিন (পিতা মইরা শেখ), লাল মিয়া (পিতা মহসিন আলী), নছিম উদ্দিন (পিতা মোহাম্মদ আলী) ও ইনছুর আলী (মাতা পাতানী বেওয়া)। সারাদিন নির্মম নির্যাতনের পর সন্ধ্যার দিকে তাদের অর্ধমৃত অবস্থায় রেলওয়ে লোকোসেডে নিয়ে যায় এবং কয়লার ইঞ্জিন ও পানির পাম্পের জলন্ত বয়লারে তাদের নিক্ষেপ করে। এ-দিনটির স্মরণে শহীদ মজিবর রহমান সরকারের পুত্র আব্দুল হামিদ বাবু তাদের বাড়ির উঠানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। [গৌতম চন্দ্র মোদক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!