You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে বোয়ালখালী উপজেলা (চট্টগ্রাম)

বোয়ালখালী উপজেলা (চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম শহরের উত্তর- পূর্বে কর্ণফুলি নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিজয় লাভের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে সমগ্র বাংলাদেশ যখন আন্দোলনমুখর, তখন এ উপজেলার ছাত্র-জনতাও তাতে শামিল হয়। নির্বাচন পরবর্তীকালে ছাত্রলীগ নেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, এম ইদ্রিস প্রমুখের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং ডা. এম এ মান্নান এমপিএ, শেখ মোজাফফর আহমদ, এম এন ইসলাম, অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, এম এ জব্বার প্রমুখের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। এঁদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর সারা দেশের মতো এখানেও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে বোয়ালখালী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আ হ ম নাছির চৌধুরী স্থানীয় কতিপয় যুবক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ একটি দল গঠন করেন। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম শহরের পার্শ্ববর্তী গোমদণ্ডী পাইলট স্কুল মাঠ, কধুরখীল ব্যাংক মাঠ, কানুনগোপাড়া হরিবাড়ির মাঠ, সারোয়াতলী রাজেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ (বর্তমাণ দক্ষিণ সারোয়াতলী), উত্তর ভূর্ষি ব্যাংক মাঠ ও ধলঘাট হাইস্কুল মাঠে বাঁশের লাঠি ও ডামি রাইফেল দিয়ে নবীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন। ডা. মাহবুবুল হক, শামসুজ্জামান হীরা, কমরেড শাহ আলম, মাহবুবুল হক, বালাগাত উল্লাহ, গিয়াসউদ্দীন চৌধুরী, পূর্ণেন্দু কানুনগো প্রমুখ প্ৰশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ কাজে সৈয়দ নেছারুল হক, বকতেয়ার নোমানী, অমল কান্তি নাথ, ডা. শান্তিপদ শীল প্রমুখ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। উল্লেখ্য যে, এ এলাকায় ঐতিহ্যগতভাবে বাম প্রগতিশীল রাজনীতির একটি বিশেষ প্রভাব ছিল।
বোয়ালখালীর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা হলেন- ডা. এম এ মান্নান এমপিএ (আওয়ামী লীগ), আতাউল হক (আওয়ামী লীগ), সৈয়দ নেছারুল হক (ন্যাপ), মো. আমীন (কমিউনিস্ট পার্টি), শেখ মোজাফফর আহমদ (আওয়ামী লীগ), কালীপদ দত্ত (ন্যাপ), আবুল বশর (আওয়ামী লীগ), জালাল উদ্দীন (ভাসানী ন্যাপ), মো. কামাল উদ্দিন (কমিউনিস্ট পার্টি), মো. আমীন (আওয়ামী লীগ), শান্তিময় শীল (ন্যাপ), অমল কান্তি নাথ (ন্যাপ), বকতেয়ার নোমানী (ন্যাপ), কালীপদ দত্ত (ন্যাপ), কবিয়াল রায়গোপাল দাশ (কমিউনিস্ট পার্টি), মো. আব্দুল জাব্বার, মো. মুন্সী মিয়া, (আওয়ামী লীগ), রমণী মোহন দাশ (কৃষকনেতা), সানন্দ শর্মা (ন্যাপ) প্রমুখ। ছাত্রদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী, কুমুদ নাগ, নুরুল আলম, আ হ ম নাছির চৌধুরী, দুলাল মজুমদার, সন্তোষ চৌধুরী, মিলন কান্তি নাথ, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। উপজেলার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন- রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী প্রসাদ চৌধুরী (বিএলএফ), সোলায়মান (এফএফ), আবুল বশর (এফএফ), আবুল হোসেন (এফএফ), শাহ আলম (ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার) এবং উদয়ন নাগ (গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার), মো. আব্দুল রশিদ (প্লাটুন কমান্ডার), মো. আব্দুল লতিফ (প্লাটুন কমান্ডার), মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী (প্লাটুন কমান্ডার)। চট্টগ্রাম শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে ১লা এপ্রিল কালুরঘাটের পূর্বপার্শ্বে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হারুনের নেতৃত্বে একটি দল ও ইপিআর মেজর রফিকের নেতৃত্বে অপর একটি দল যৌথভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী কালুরঘাট সেতু পার হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে না পারে। বোয়ালখালীর সর্বস্তরের জনগণ কালুরঘাটে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বাঙালি সৈনিকদের সার্বক্ষণিক খাবার সরবরাহ করে। ১২ই এপ্রিল পাকবাহিনী স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ করলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের ঘাঁটি সরিয়ে ফেলেন। এ-সময় সেনাবাহিনীর সিপাহি নায়েক আলী শহীদ এবং ক্যাপ্টেন হারুন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এদিনই পাকিস্তানি বাহিনী বোয়ালখালী উপজেলায় প্রবেশ করে এবং বর্তমান ইউএনও অফিসে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে।
বোয়ালখালী উপজেলায় স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী – ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ – সক্রিয় ছিল। আর স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- মোজাহের সওদাগর (কদুরখালী), মোজাফফর আহমদ ওরফে টিক্কা খান (বোয়ালখালী থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক), দেলাওয়ার হোসেন সওদাগর (সারোয়াতলী), আবুল কাশেম (পোপাদিয়া), এনায়েত খাঁ, আব্দুল সুবহান সওদাগর, মো. ছাদেক, মোহাম্মদ মিয়া (পিতা মৌলবি দলিল সাহেব, আলবদর কমান্ডার), মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মো. উল্লাহ মেম্বার, মো. আজিজুল হক, মো. এনায়েত খান, মো. মঞ্জুরুল আলম, মো. আবুল কাশেম, মো. ফরিদ আহম্মদ চৌধুরী, মো. শাহআলম (চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটি; কধুরখীল), আহম্মদ হোসেন (পূর্ব গোমদন্ডী), মো. আবছার উদ্দীন (চেয়ারম্যান, পূর্ব গোমদন্ডী), মো. আবু বক্কর (কধুরখীল), মৌলানা জাকির হোসাইন (ইমামনগর, কধুরখীল), মো. সৈয়দ মেম্বার (কধুরখীল), মো. সিরাজুল ইসলাম (কধুরখীল), মো. নূর মোহাম্মদ (কধুরখীল), মো. আবুল হাশেম (পশ্চিম গোমদন্ডী), এডভোকেট এবাদুল্লাহ (আলবদর), মো. এজাহার মিয়া (রাজাকার কমান্ডার), মো. সৈয়দ মেম্বার (কধুরখীল), মো. ইউসুফ মেম্বার (সদস্য শান্তি কমিটি), নুরুল হুদা (শাকপুরা), চাঁন বক্স (শাকপুরা), খুইল্যা মিয়া (শাকপুরা), দুলা মিয়া (শাকপুরা), আব্দুল মালেক (শাকপুরা), নুরুল আলম (রাজাকার কমান্ডার, শাকপুরা), আবু তাহের (শাকপুরা), পুতিন্যা (শাকপুরা), পেটান্যা (শাকপুরা), আব্দুল শুক্কুর (পোপাদিয়া), আবুল কাশেম (পোপাদিয়া), নুরুল ইসলাম ওরফে বাইশ্যা (পোপাদিয়া), অলি মিয়া মেম্বার (পোপাদিয়া), সাইয়েদ মো. আলী (পোপাদিয়া), মফজল হোসেন (সারোয়তলী), বানু মিয়া (সারোয়তলী), দুলা মিয়া (সারোয়তলী), মধু মিয়া (সারোয়তলী), ভুচ্যা (সারোয়তলী), ওবায়দুর রহমান (সারোয়তলী), শুক্কুর (সারোয়তলী), আবু মুছা চৌধুরী ওরফে কাঞ্চন মিয়া (চরনদ্বীপ), মুছা মিয়া (চরনদ্বীপ), লাল মিয়া (চরনদ্বীপ), মো. এনায়েত খান (খরনদ্বীপ), মো. মঞ্জুরুল আলম (খরনদ্বীপ), সাহেব মিয়া (কালাইয়ার হাট), বজল মিয়া (কালাইয়ার হাট), জাকির হোসন (কালাইয়ার হাট), লেদু মিয়া ওরফে লেদ্যা (কালাইয়ার হাট), আবুল হাশেম (আহল্লা, কড়লডেঙ্গা), ওছি মিয়া ওরফে ও”ছ্যা (কধুরখীল), মোহাম্মদ বক্স (কধুরখীল), মো. এনায়েত খাঁ (খরনদ্বীপ), মো. মঞ্জু (শ্রীপুর, খরনদ্বীপ)। এদের উদ্যোগে শান্তি কমিটি, আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। পাকবাহিনী চট্টগ্রাম শহর দখলে নেয়ার পর থেকেই মুসলিম লীগের সদস্যরা তৎপর হতে শুরু করে। প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল মুসলিম লীগের। কধুরখীল মুসলিম হাইস্কুলে মোজাহের সওদাগরের নেতৃত্বে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত এক সভায় বোয়ালখালীতে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ঐ সভা থেকে দুজন রাজাকার গুডস হিল নির্যাতনকেন্দ্র-এ (ফজলুল কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরস্থ বাসভবন, মুক্তিযুদ্ধকালে যা অন্যতম নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়) এসে দুটি রাইফেল নিয়ে যায় এবং কধুরখীল গ্রামে তিনজনকে হত্যা করে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবন ছিল রাজাকারদের মূল ঘাঁটি। রাজাকাররা হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং তাদের অনেককে হত্যা করে। কালুরঘাট সেতুতে রাজাকারদের একটি চেকপোস্ট ছিল। সেখানে তারা পুরুষদের বাস থেকে নামিয়ে উলঙ্গ করে কে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তা যাচাই করত। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নিশ্চিত হলে তাকে সেতুর নিচে নিয়ে হত্যা করত।
বোয়ালখালী উপজেলায় দুটি বধ্যভূমি ছিল— রইস্যার মা-র ঘাট বধ্যভূমি- এবং কালুরঘাট রেলসেতু বধ্যভূমি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকদের ধরে এনে নির্যাতনকেন্দ্রে হত্যা করে রইস্যার মার ঘাটে ফেলে দেয়া হতো। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারগামী বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মেরে কালুরঘাট সেতুর নীচে ফেলে দেয়া হতো। এছাড়া ১ নং কধুরখীল, পশ্চিম শাকপুরা, সারোয়াতলী, উত্তর ভূর্ষি ও পোপাদিয়া গ্রামে বহু লোককে হত্যা করে কবর দেয়া হয়। ২০শে এপ্রিল পশ্চিম শাকপুরায় একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে শতাধিক সাধারণ মানুষ শহীদ হন। এটি পশ্চিম শাকপুরা গণহত্যা নামে পরিচিত। শাকপুরা গণহত্যা সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। এতে ৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ এবং ২৫ জন আহত হন। কধুরখীল গণহত্যা সংঘটিত হয় ৩১শে অক্টোবর। এতে ২০ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
এ উপজেলার গোমদণ্ডীতে ছিল পাকবাহিনীর প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র। এখানে পাকসেনা ও রাজাকাররা বাঙালি যুবকদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাত। ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করত এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করত। চরণদ্বীপ ৭ নং ইউনিয়নের ডা. এজাহার এতে নেতৃত্ব দেয়|
বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ের গভীর অরণ্যে চাইলত্যাছুড়িতে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠে। এ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন মো. শাহ আলম এবং ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগ। ক্যাপ্টেন করিম স্থানীয় যুবকদের নিয়ে একটি অপারেশন গ্রুপ গঠন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেন। ইপিআর সুবেদার মেজর টি এম আলীর নেতৃত্বে পদুয়ার গহীন অরণ্যে আরেকটি বাহিনী গঠিত হয়। করিম বাহিনী এবং টি এম আলীর বাহিনী আলোচনার মাধ্যমে অপারেশন পরিচালনা করত।
বোয়ালখালীতে পাকিবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত অপারেশনগুলো হলো- কালুরঘাট প্রতিরোধযুদ্ধ, কর্ণফুলী নদীতে জাহাজ অপারেশন, নাপিতের ঘাটা যুদ্ধ শায়রাপুল অপারেশন ফকিরাখালীর যুদ্ধ, রায়খালী ব্রিজ অপারেশন সারোয়াতলী যুদ্ধ গোমদণ্ডী সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, বোয়ালখালী থানা যুদ্ধ, গোমদণ্ডী অপারেশন এবং পূর্ব গোমদণ্ডী বণিকপাড়া যুদ্ধ। কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ চলে ২৬শে মার্চ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত। কর্ণফুলী নদীতে জাহাজ অপারেশন পরিচালিত হয় ১লা এপ্রিল। নাপিতের ঘাটা যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৩০শে অক্টোবর। এতে ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। শায়রাপুল অপারেশন পরিচালিত হয় ২২শে নভেম্বর কমান্ডার শাহ আলম এবং ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগের নেতৃত্বে। এটি একটি ব্যাপক জনযুদ্ধ ছিল। ফকিরাখালীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। এতে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। রায়খালী ব্রিজ অপারেশন পরিচালিত হয় ১০ই ডিসেম্বর। সারোয়াতলী যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৪শে আগস্ট। এতে একজন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। গোমদণ্ডী সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন পরিচালিত হয় ২৮শে আগস্ট টি এম আলী, কমান্ডার আবুল হোসেন এবং আ হ ম নাছির চৌধুরীর নেতৃত্বে। এ অপারেশনে অনেক রাজাকার হতাহত হয় এবং দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। গোমদণ্ডী অপারেশন পরিচালিত ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এতে ৬ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার ধরা পড়ে এবং হানাদারদের কিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। বোয়ালখালী থানা যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এতে ২ জন সাধারণ মানুষ ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন। গোমদণ্ডী অপারেশন পরিচালিত হয় ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। পূর্ব গোমদণ্ডী বণিকপাড়া যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর। এ- যুদ্ধে ২ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ক্যাপ্টেন তানভীর আহম্মদসহ কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে। পরের দিন ১৭ই ডিসেম্বর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আহমদুর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা আব্দুল আলী, পশ্চিম কধুরখিল ও নূরুল আজিম চৌধুরী, বীর প্রতীক (পিতা আমির হোসেন চৌধুরী, গোমদস্তি)।
বোয়ালখালী উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- শেখ মোজাফফর আহমদ, এখলাচুর রহমান (সিও অফিস অপারেশনে শহীদ), আব্দুল ওয়াজেদ, রেজাউল করিম আরবী বেবী (সিও অফিস অপারেশনে শহীদ), মো. ইউনুছ ড্রাইভার (সিও অফিস অপারেশনে শহীদ), এস এম রফিক (আইচ ফ্যাক্টরি রোড অপারেশনে শহীদ), হাবিলদার ফজলুল হক বারী (সিও অফিস অপারেশনে শহীদ), সিপাহি নায়েক আলী (কালুরঘাট যুদ্ধে শহীদ), মোহাম্মদ রফিক (কালারপোল যুদ্ধে শহীদ), আহম্মদ ছফা (মুরাদ মুন্সীর হাট যুদ্ধে শহীদ), সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং নুরুল হক। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা, সারোয়াতলী ও কধুরখীল গ্রামে তিনটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সিপাহি নায়েক আলীর স্মরণে বহদ্দরপাড়ায় একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। [উদয়ন নাগ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!