বোয়ালখালী থানা যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)
বোয়ালখালী থানা যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। এতে ২ জন সাধারণ মানুষ ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
বোয়ালখালী চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী একটি উপজেলা কর্ণফুলী নদীর পূর্বপাড়ে এর অবস্থান। বোয়ালখালী থানার সর্বদক্ষিণে বোয়ালখালী খাল অবস্থিত। স্থানীয় জনগণ যাতায়াতের জন্য এ খাল ব্যবহার করত। খালের পাড়ে বোয়ালখালী থানা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স অবস্থিত। পটিয়া ও বোয়ালখালী থানা এ খালটি দ্বারা বিভক্ত। এ থানায় অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী প্রতিদিন হত্যা, নির্যাতন ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করত। চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নৌকা থেকে নামিয়ে তীরে এনে উলঙ্গ করে তাদের ধর্ম পরিচয় পরীক্ষা করত। এরপর সন্দেহভাজনদের গুলি করে হত্যা করত।
ক্যাপ্টেন করিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ছুটিতে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এ উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় যুবক, ছুটিতে থাকা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সংগঠিত করে একটি বাহিনী গঠন করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন বোয়ালখালী থানা আক্রমণ করে থানার পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করাবেন। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক গভীর রাতে ক্যাপ্টেন করিম থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে প্রত্যেক গ্রুপকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১নং গ্রুপ থানার উত্তর পাশে, ২নং গ্রুপ বোয়ালখালী খালের দক্ষিণ পাশে হাবিলাসদ্বীপ গ্রামে এবং ৩নং গ্রুপ তেলি ফকিরের দরগাহর পাশে অবস্থান নেয়। তেলি ফকিরের দরগাহর রাস্তাটি ছিল শত্রুপক্ষের পালানোর একমাত্র রাস্তা। পরিকল্পনা মোতাবেক মুক্তিবাহিনীর তিনটি গ্রুপ তিনদিক থেকে থানা ঘিরে ফেলে। দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে রেকি করার জন্য থানার দিকে পাঠানো হয়। কিন্তু রেকি রিপোর্ট সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। ঐদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ট্রুপস থানায় অবস্থান করছিল। এ খবর মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। রাত ১২টায় ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু হয়। সারারাত উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে ভারী অস্ত্র থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে থানা দখল করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে রাতের শেষ প্রহরে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের পজিশন থেকে সরে আসেন। এ-যুদ্ধে ২ জন সাধারণ মানুষ ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির কয়েকজন লোক পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে উৎসাহ দিতে থানায় প্রবেশ করলে পাকিস্তানি বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। [উদয়ন নাগ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড