You dont have javascript enabled! Please enable it!

বোয়ালিয়া স্কুল আক্রমণ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

বোয়ালিয়া স্কুল আক্রমণ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) পরিচালিত হয় দুবার – ২২শে আগস্ট ও ৭ই অক্টোবর। প্রথমবার আক্রমণে ১৫-২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। দ্বিতীয় আক্রমণে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি হানাদার সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। অপরপক্ষে ৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন|
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মেহেদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর প্রায় অর্ধশত সদস্য গোমস্তাপুর থানার কাশিয়াবাড়ি থেকে ২২শে আগস্ট রাত প্রায় ৩টার দিকে হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি বোয়ালিয়া স্কুলে আক্রমণ করেন। এ অপারেশনে দলদলী কোম্পানির কমান্ডার লে. রফিকুল ইসলাম, কমান্ডার ও ইপিআর হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, আনসার পিসি সৈয়দ আবদুর রাজ্জাক ও জয়নাল আবেদীন অংশ নেন। পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণে ১৫-২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। এ অপারেশন শেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা কালুপুর ঠাকুরের আমবাগানে ফিরে আসেন। তাঁরা ফিরে আসার ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে হানাদার বাহিনী বম্বিং করতে-করতে কালুপুরের দিকে অগ্রসর হলে দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলা গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বোয়ালিয়া স্কুলে দ্বিতীয়বার আক্রমণ করেন। ৭ই অক্টোবর ভোর ৪টার দিকে দলদলী কোম্পানি কমান্ডার লে. মো. রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর-সহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা নন্দলালপুর গ্রাম অতিক্রম করে বোয়ালিয়ার কাছাকাছি পৌছেন। নন্দলালপুর গ্রামের নির্জন এলাকায় কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মুক্তিযোদ্ধারা বোয়ালিয়া স্কুলে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পাকসেনারা অগ্রবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তৎক্ষণাৎ ওয়ারলেসের মাধ্যমে সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি তখন আলীনগর সীমান্তের বিপরীতে ভারতের গান্ধীনগর বিএসএফ ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীকে আর্টিলারি সাপোর্ট দেয়ার অনুরোধ জানালে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষার ওপর আর্টিলারির ফায়ার শুরু করে। ফলে পাকবাহিনী ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। বিএসএফ-এর গুলিতে তাদের বেশকিছু সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ অব্যাহত রেখে এক পর্যায়ে বোয়ালিয়া ত্যাগ করে কাশিয়াবাড়ি ডিফেন্সে ফিরে আসেন।
বোয়ালিয়া স্কুল যুদ্ধের সময় আলমপুর গ্রামের মহরম শেখ (পিতা বেলায়েত শেখ), সানোয়ারা খাতুন (পিতা মহরম শেখ) ও দেরাসাত আলী (পিতা সৈয়দ আলী) নিহত হন। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি হানাদার সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। [মাযহারুল ইসলাম তরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!