বৈটপুর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর)
বৈটপুর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় ৯ই অক্টোবর। বাগেরহাট শহরের পূর্বদিকে দড়াটানা নদীর তীরে অবস্থিত বৈটপুর গ্রামে রাজাকার বাহিনী জবাই করে ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক রাজাকার এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
বৈটপুর গ্রামের হরিশ গুহ ওরফে ধলু গুহ ছিলেন প্রতিপত্তিশালী মানুষ। তাঁর জামাতা শিবপদ বসু ছিলেন সেই সময়ে বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কৌশলগত কারণে হরিশ গুহ ও তাঁর কন্যা দীপালি গুহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু রাজাকাররা হরিশ গুহের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়নি। তাদের কাছে মনে হয়েছিল হরিশ গুহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে ভারতে চলে গেলে তাদের বেশি লাভ হতো। তাঁর জায়গা-জমি-সম্পত্তি সহজে তারা দখল করতে পারত। এ ক্ষোভ থেকে তারা সিরাজ মাস্টারকে বৈটপুরে গ্রামে গণহত্যা চালাতে প্ররোচিত করে।
৯ই অক্টোবর রাত ৩টার দিকে রাজাকাররা হরিশ গুহের বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলে। নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তারা হরিশ গুহ ও তাঁর পুত্র প্রদীপ গুহ ওরফে নিলু গুহকে ডাকতে থাকে। প্রদীপ গুহ সিরাজ মাস্টারকে দেখে বাড়ির ছাদের ওপর উঠে একটা গাছ বেয়ে যখন পালানোর চেষ্টা করছিলেন, তখন রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর রাজাকাররা বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে হরিশ গুহ এবং তাঁর ছোটো ভাই গৌরপদ গুহকে ধরে বাইরে আনে। একই সময়ে তারা পাশের বাড়ির সুশীল মজুমদার এবং তার বাড়ির বোবা একটি কাজের ছেলেকে সেখানে বেঁধে নিয়ে আসে। এরপর গুহবাড়ির চত্বরে একে-একে সবাইকে জবাই করে হত্যা করে। [স্বরোচিষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড