বৈশাখী মাঠ স্মৃতিস্তম্ভ (জামালপুর সদর)
বৈশাখী মাঠ স্মৃতিস্তম্ভ (জামালপুর সদর) জামালপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। সদরের বোসপাড়ায় শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহাসিক দয়াময়ী মন্দির অবস্থিত। মন্দিরের সম্মুখস্থ মাঠে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই প্রতিবছর বাসন্তী শুক্লা অষ্টমী তিথি উপলক্ষে অষ্টমী মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এখনো হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ মাঠে প্রতিবছর অষ্টমী মেলার পর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই থেকে এই মাঠ বৈশাখী মাঠ নামে পরিচিতি লাভ করে। মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে জেলা সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের স্থায়ীভবন অবস্থিত। এই মাঠেরই দক্ষিণ পার্শ্বে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ।
২০০৪ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জামালপুর কর্তৃক এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়। ৪ ফুট উঁচু আয়তাকার পাকা মূল বেদীর ওপর নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি কংক্রিটে তৈরি। তার ওপরে রয়েছে কালো মার্বেল পাথরের আস্তরণ। তার ওপরে একটি নির্দিষ্ট পরিসর জুড়ে রয়েছে কৃষ্ণবর্ণের শ্বেত পাথরের প্রতিস্থাপন। স্তম্ভটির উচ্চতা ২০ ফুট এবং চওড়া ৭ ফুট। স্তম্ভটির উপরিভাগে রয়েছে ১ ফুট পরিমাণ সাদা টাইলসের ব্যবহার। আয়তাকার মূল বেদীর সামনের মাঝামাঝি ভাগ থেকে বেদীর অর্ধেক পর্যন্ত কংক্রিটে তৈরি শ্বেতবর্ণের প্রায় অর্ধবৃত্তাকার একটি ছাউনি আছে এবং ছাউনির প্রান্তভাগ ভেদ করে স্তম্ভটি ওপরের দিকে উঠে গেছে। মূল বেদীর নীচ থেকে লালবর্ণ ইটের ঈষৎ ঢালু পথ নেমে গেছে। স্বল্প পরিসরের পথটির দুপাশে রয়েছে স্টেইনলেস স্টিল পাইপের বেষ্টনী। এ পথেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারীরা এসে স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
স্মৃতিস্তম্ভটির গায়ে কৃষ্ণবর্ণের শ্বেতপাথরের ওপর জামালপুর জেলার ৭৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম উৎকীর্ণ রয়েছে। তন্মধ্যে সদর উপজেলার ২২ জন, সরিষাবাড়ি উপজেলার ২৮ জন, মেলান্দহ উপজেলার ৮ জন, মাদারগঞ্জ উপজেলার ৪ জন, ইসলামপুর উপজেলার ১০ জন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৩ জন ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ২ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের মধ্যে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ইপিআর মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে।
স্মৃতিস্তম্ভটি জামালপুরবাসীর নিকট গভীর শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণার উৎস। একদিকে স্মৃতিস্তম্ভটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করছে, অন্যদিকে এর গায়ে উৎকীর্ণ নামগুলো অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের দেশমাতৃকার জন্য জীবনত্যাগের গৌরবময় পরিচয় তুলে ধরছে। তাই প্রতিবছর ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। [আহমদ আজিজ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড