You dont have javascript enabled! Please enable it!

বেলদহ যুদ্ধ (আটঘরিয়া, পাবনা)

বেলদহ যুদ্ধ (আটঘরিয়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ১১ই ডিসেম্বর। এতে শত্রুপক্ষের অনেকে হতাহত হয়। আটঘরিয়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা দলের অবস্থান ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— আটঘরিয়া থানা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন রেনুর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী- (বিএলএফ), পাবনা শহরের নয়নামতি গ্রামের মো. শাহজাহান আলীর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী (বিএলএফ), ঈশ্বরদী উপজেলার মো. ওয়াছেব আলীর নেতৃত্বে ফ্রন্ট ফাইটার (এফএফ), চাটমোহর উপজেলার এম আই চৌধুরীর নেতৃত্বে ফ্রন্ট ফাইটার (এফএফ) এবং পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার আব্দুল মান্নান গোরার নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী (বিএলএফ)। উল্লিখিত দলগুলোর মধ্যে মো. শাহজাহান আলীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী আটঘরিয়া উপজেলায় প্রথম প্রবেশ করে। দলে মোট ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁরা ভারী ও মাঝারি ধরনের অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করতে থাকেন।
মুজিব বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, এলাকার যুবকদের রিক্রুট করে তাদের ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দলভুক্ত করা, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিধন করা, ব্রিজ, কালভার্ট ধ্বংস করে শত্রুদের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা। সুযোগ বুঝে গেরিলা কায়দায় শত্রুকে আক্রমণ করা। জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তাতে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছিল। পাবনা শহরের রাস্তায় নৌকা চলেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজাকার ও -আলবদরদের সহায়তায় চারদিকে গণহত্যা চালিয়েছে।
১১ই ডিসেম্বর আটঘরিয়া থানা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে বেলদহ গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। এর প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে মো. শাহজাহান আলী কমান্ডারের নেতৃত্বে শহিদুল্লাহ আহমেদ বকুল, রেজাউল করিম রেজা, আব্দুল মতিন জিন্নাহ, জয়নুদ্দিন, আশরাফ আলী আন্টু, গিয়াস উদ্দিন, কানু মিয়া, আব্দুল আজিজ, রবিউল ইসলাম, নুরুল ইসলাম রুব ও মো. হিরাসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা বেলদহ গ্রামের মো. তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ১১ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে যে, পশ্চিম দিক থেকে অর্থাৎ আটঘরিয়া থানা এলাকা থেকে একদল সৈন্য বেলদহ গ্রামের দিকে এগিয়ে আসে। এরপর গ্রামবাসীর ওপর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পথিমধ্যে এম্বুশ করেন। পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকার বাহিনী এম্বুশের মধ্যে এসে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদে স্থানে চলে যান। এ-যুদ্ধে শত্রুপক্ষের অনেকে হতাহত হয়। [আমিরুল ইসলাম রাঙা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!