You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম বেলায়েত হোসেন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম বেলায়েত হোসেন

বেলায়েত হোসেন, বীর উত্তম (১৯৪৫-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৬ই মে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাজেদ মিয়া এবং মাতার নাম বিবি মরিয়ম। তিনি ছিলেন এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম তফসিলা বেগম।
সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া এ কে একাডেমি হাইস্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পাশ করার পর ১৯৬৩ সালে বেলায়েত হোসেন পাকিস্তান সেনাবহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে সফল প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। তবে মার্চের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এদেশে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে ২৭শে মার্চ তিনি মেজর শাফায়াত জামিল, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। ঐদিন সকাল ৯টায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খিজির হায়াত খানসহ অন্যান্য অবাঙালি অফিসার ও সৈন্যকে সভা চলাকালে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে সফল অংশগ্রহণের পর তিনি ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হলে তাঁকে ‘কে’ ফোর্সে আত্তীকরণ করা হয়। মন্দবাগ সাব-সেক্টরে ক্যাপ্টেন গাফফার হালদার, বীর উত্তমএর নেতৃত্বে কসবা/হালদা নদী এলাকায় বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত সালদা নদী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত অবস্থান ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ এলাকা দখল করার দুঃসাহসী পরিকল্পনা নেন। ১৩ই নভেম্বর তাঁদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী সালদা নদী এলাকার অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তবে পরের দিন ১৪ই নভেম্বর হারানো অবস্থান পুনর্দখলের উদ্দেশ্যে তারা আনোয়ারা গ্রামের পশ্চিম দিকে গোডাউন এলাকা হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালান। তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বেলায়েত হোসেন তাঁর বাহিনী নিয়ে শত্রুসৈন্যদের ধাওয়া করতে থাকেন। এমতাবস্থায় শত্রুসৈন্যদের ছোড়া একটি গুলি তাঁর মাথায় লাগে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছার পূর্বেই তিনি শহীদ হন। সালদা নদীর পাড়ে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার শহীদ নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেনকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৩৮, খেতাবের সনদ নং ৩১)। এছাড়াও তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নামে ৫নং শহীদ বেলায়েত কোম্পানি (চট্টগ্রাম সেনানিবাস), শহীদ বেলায়েত সড়ক (ঢাকা সেনানিবাস), শহীদ বেলায়েত হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয় (গাছুয়া) এবং শহীদ বেলায়েত খেলার মাঠ (গাছুয়া) নামকরণ করা হয়। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড