মুক্তিযুদ্ধে বেতাগী উপজেলা (বরগুনা)
বেতাগী উপজেলা (বরগুনা) ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার পর থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বেতাগী উপজেলার সর্বস্তরের মানুষও মুক্তির চেতনায় উন্মুখ হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি। ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুমায়ুন কবির হিরু (পরবর্তীতে এমপি)-র উদ্যোগে উপজেলায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ- সভাপতি আব্দুর রশীদ খলিফাকে সভাপতি এবং আব্দুল মন্নান মিয়াকে সম্পাদক করা হয়। এ-সময় ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি হাইকমান্ডও গঠন করা হয়। এরপর ২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে নির্বিচার হত্যার খবর বেতাগীতে পৌছানোর পর ২৬শে মার্চ সকালে হুমায়ুন কবির হিরুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একটি মিছিল বের করে ডাকবাংলোর সামনে গিয়ে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দেন এবং সেই পতাকা- স্ট্যান্ডে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। সকাল ১১টায় টিএন্ডটি অফিসে চাঁদপুর থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান-সম্বলিত একটি ওয়ারলেস বার্তা পৌঁছলে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে খণ্ড-খণ্ড মিছিল বের করেন। মুক্তিবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ২৭শে মার্চ সকাল থেকে থানা পরিষদ-চত্বরে ৫০-৬০ জন যুবককে নিয়ে তাঁরা প্রশিক্ষণ শুরু করেন। সশস্ত্র এ প্রশিক্ষণে রাইফেল সরবরাহ করেন থানার সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুর রহমান। আনসার কমান্ডার আব্দুল লতিফ হাওলাদার, সৈয়দ আলী, মকবুল হোসেন তালুকদার এবং সেনাবাহিনীর সদস্য আব্দুল মোতালেব শিকদার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হুমায়ুন কবির হিরুর প্রচেষ্টায় মোতালেব শিকদার, গোলাম মোস্তফা সিকদার, খবির উদ্দিন ও আলী আহমেদসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় সৈনিক পুলিশ- আনসারদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। এদের মধ্যে হুমায়ুন কবির হিরু প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার-এর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ভারতে যান। তিনি ফিরে এসে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা তৈরি করেন। হুমায়ুন কবির হিরু ও আব্দুল মন্নান মিয়ার উদ্যোগে জাতীয় পরিষদ সদস্য আসমত আলী সিকদারের উপস্থিতিতে তালগাছিয়া হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বৈঠক হয়। এভাবে বেতাগীতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম।
সেনাবাহিনীর নন-কমিশন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব সিকদারকে থানা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার নির্বাচিত করা হয়। তখন তাঁদের হাতে ছিল মাত্র একটি ৩০৩ রাইফেল, একটি পিস্তল ও তিনটি বন্দুক। তাঁরা মুক্তিবাহিনীর ব্যবহারের জন্য বেসামরিক নাগরিকদের বন্দুক সংগ্রহের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ৭টি অস্ত্র সংগৃহীত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের ব্যাপারে জনগণের সহায়তা লাভে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যা বেতাগী বেসামরিক সহায়ক কমিটি নামে পরিচিত। এ কমিটিতে শাহ আলম মিয়া (সাবেক চেয়ারমান, বুড়ামজুমদার), আব্দুল আজিজ হাওলাদার (সাবেক চেয়ারম্যান, বেতাগী ইউনিয়ন), শাহাবুদ্দিন শিকদার, আব্দুল কাদের গাজী (সাবেক চেয়ারম্যান, বিবিচিনি), মনোরঞ্জন বল, আনোয়ার হোসেন মাতবর (সাবেক চেয়ারম্যান, হোসনাবাদ), ফজলুল হক মাস্টার, শুখরঞ্জন রায় (সাবেক চেয়ারম্যান, কাজিরাবাদ), হামেজ আলী ডাক্তার (ভাইস-চেয়ারম্যান, মোকামিয়া), আব্দুল আজিজ খান (সাবেক চেয়ারম্যান, সরিষামুড়ি), মনোয়ার হোসেন শাহজাহান প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কমিটির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় শাহ আলম মিয়া (চেয়ারম্যান, বুড়ামজুমদার)-র ওপর। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে
এখানকার যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে আরো যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা হলেন- শাহজাদা আব্দুল মালেক খান (সাবেক শিল্পমন্ত্রী), হুমায়ুন কবির হিরু, এম এ মান্নান মৃধা, সিরাজুল ইসলাম (ম্যাজিস্ট্রেট), আব্দুর রব, মো. মোতালেব সিকদার, ফারুক আহমেদ সিকদার (ছাত্রনেতা), আব্দুল ওয়াজেদ হাওলাদার, আব্দুর রব (লক্ষ্মীপুরা), ওয়াজেদ আলী সিকদার, খবির উদ্দিন, আমজাদ হোসেন সিকদার, আব্দুর রহমান মুন্সী, হাতেম আলী গাজী, আব্দুল কাদের শরীফ, আমজাদ হোসেন, হাফিজুর রহমান, গোলাম মোস্তফা সিকদার, ইউনুস মিঞা, আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশীদ, মোসলেম আলী ও আব্দুল মজিদ (আনসার কমান্ডার)। বেতাগী ও বরগুনার শতাধিক যুবক প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বেতাগীতে গড়ে ওঠা এই বেসামরিক সহায়ক কমিটি বেতাগী থানাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাঁরা অস্ত্রসংগ্রহ, তহবিল গঠন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদান ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও পাক সরকারের বাঙালি কর্মকর্তাদের বশীভূত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করানোর দায়িত্বও পালন করেন।
তালগাছিয়া হাইস্কুলে সমাবেশ করে মুক্তিবাহিনীর থানা ইউনিট গঠন করা হয়। এর পরপরই আসমত আলী সিকদার এমএনএ মঠবাড়িয়া এলাকায় আত্মগোপনকারী পাকবাহিনীর বাঙালি ক্যাপ্টেন মেহেদী আল ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন থানায় বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা দলগুলোকে সংগঠিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার হুমায়ুন কবির হিরুকে মেহেদী আল ইমামকে মুজিবনগরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেন। সেখানে যাওয়ার পর ক্যাপ্টেন মেহেদীকে সাব-কমান্ডার করে পটুয়াখালী জেলা সাবসেক্টরের কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিদের এক গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে থানাওয়ারি ইউনিট গঠন করে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। পটুয়াখালী জেলার মধ্যে বেতাগী থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী ইউনিট ছিল। অক্টোবর মাসের শেষদিকে পটুয়াখালী সাবসেক্টর কমান্ড থেকে জুলফিকার আলী ও হাতেম আলী নামে দুজন নন-কমিশন সেনাকর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে বেতাগী ইউনিটের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। পার্শ্ববর্তী মির্জাগঞ্জ থানায় মো.আলতাফ হায়দার-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অরেকটি দল গড়ে ওঠেI চান্দখালি বন্দরকে কেন্দ্র করে বেতাগী, বরগুনা ও মির্জাগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে অরেকটি দল গঠিত হয়। আলতাফ হায়দার এবং মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলদুটি বেতাগী মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। এভাবে বেতাগী কমান্ড প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত একটি সুশৃঙ্খল মুক্তিবাহিনীর মর্যাদা লাভ করে। বেতাগীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিরোধ শুরু হয় ২৫শে এপ্রিল। এদিন সন্ধ্যায় বিষখালী নদীতে পাকসেনাদের গানবোট প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে প্রতিরোধের সংকল্প নেয়। শতশত মানুষ বন্দুক, বর্শা, রামদা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নদীর পাড়ে গিয়ে একত্রিত হয়। তাদের চোখেমুখে ছিল প্রতিরোধের স্পৃহা। সে-রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষও গভীররাত পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
পাকসেনারা অধিকাংশ সময়ই বরগুনা থেকে বেতাগীতে প্রবেশ করত। বিষখালী নদী দিয়ে বরিশাল থেকে সরাসরি তারা বরগুনা আসত এবং সেখান থেকে বেতাগী আসত। তবে মাঝে-মধ্যে পটুয়াখালী থেকে সুবিদখালী-ঝোপখালী নদীপথেও তারা যাতায়াত করত এবং থানাকে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করত।
বেতাগীতে মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ছিল- আফেজউদ্দিন আহম্মেদ (ফুলতলা), আবদুল মালেক মহারাজ মিয়া (ঝিলবুনিয়া), মেছের হাওলাদার (বেতাগী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান), মতিয়ার রহমান খান (বেতাগী), মোশারেফ হোসেন সিকদার (সাবেক মেম্বার), আলতাফ হোসেন খান, হারুন-অর-রশীদ খান, কাঞ্চন মল্লিক (ভোলানাথপুর), মতিয়ার রহমান মল্লিক, ফজলুর রহমান সিকদার, সত্তার মেম্বার (কিসমত করুণা), বজলুর রহমান হাওলাদার, আব্দুল বারেক (হোসনাবাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), আতাহার উদ্দিন মুন্সী (মোকামিয়া), আব্দুল গফুর (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), কমান্ডার মমিন উদ্দিন (বুড়ামজুমদার), মাস্টার আব্দুল মালেক, আব্দুল আজিজ, আব্দুর রশীদ জোমাদ্দার (সরিষামুড়ি), মোসলেম উদ্দিন (ইউপি সদস্য) প্রমুখ। পাকবাহিনী এখানে তাদের অনুগত লোকজন নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করত। তারা রাজাকার দের প্রশিক্ষণ দিত, পাকসেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত, মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করত এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আনোয়ার হোসেন পনু, আব্দুল বারেক, আবদুস সাত্তার, মোমিন উদ্দিন, আতাহারউদ্দিন মুন্সি, বজলুর রহমান প্রমুখ স্বাধীনতাবিরোধী নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনা ও তাদের দোসররা ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বেতাগী ও বদনীখালী বন্দরের ৫০টি দোকান ভস্মীভূত করে। হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেয়। এসব হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন সিকদার, এম এ মান্নান মৃধা, মুজাহার আলী হাওলাদার, রহম আলী সিকদার, নওয়াব আলী মৃধা, নিজামুদ্দিন, ডা. সুশীল রায়, প্রিয়লাল, অর্জুন রায়, তারিণী কর্মকার, জগু সাহা, বিজয় পাল, বিনোদ বিহারী কুণ্ডু, বনবিহারী পাল, মণীন্দ্র কর্মকার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বিবিচিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামসউদ্দিন গাজী পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের শিকার হন। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে ধরে নিয়ে কয়েক মাস কারাগারে আটকে রাখে এবং অমানুষিক নির্যাতন চালায়। শাহাবুদ্দিন শিকদারের বাড়িতে তিনবার অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইছাহাক দফাদারকে কয়েক মাস পটুয়াখালী কারাগারে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
পাকবাহিনী বেতাগী থানাকে নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। সাধারণত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পক্ষের লোকদের ধরে এনে থানা এলাকায় গাবগাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো। স্থানীয় ঘটুর রাইস মিল এলাকাও পাকবাহিনী নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত।
পাকবাহিনী নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে বেতাগী থানা ক্যাম্প থেকে বিষখালী নদী দিয়ে একটি গানবোটে এসে বদনাখালী বাজারে আগুন দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকেন। ঘটনার দিন তাঁরা ৬টি ভাগে বিভক্ত হয়ে বন্দরের দক্ষিণ দিক থেকে পাকবাহিনীর ওপর গুলি ও রকেট লঞ্চার নিক্ষেপ করেন। এমতাবস্থায় পাকবাহিনী দক্ষিণ দিকে সমবেত হলে বিপরীত দিক থেকে আবার তারা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মধ্যে পড়ে। একঘণ্টা ব্যাপী এ-যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ আহত হন। এটি বদনাখালী যুদ্ধ নামে পরিচিত। এরপর পাকসেনারা পালিয়ে যায় এবং ১লা ডিসেম্বর রাজাকারদের একটি দল শাহাবুদ্দিন শিকদারের বাড়িতে এসে অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আলহাজ্ব ইমান উদ্দিন ডাক্তার (পিতা রসুল উদ্দিন, দক্ষিণ হোসনাবাদ) ও কার্ত্তিক চন্দ্র সরকার (পিতা বিপেন চন্দ্র সরকার, বকুলতলী)। জলিসা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুরনো জলিসা খালের সাঁকো পার হওয়ার সময় পেছন থেকে ইমান উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভাড়ানি খাল দিয়ে নৌকাযোগে বেতাগী যাওয়ার পথে কুমড়াখালী বাজারে পাকসেনারা কার্ত্তিক চন্দ্র সরকারকে আটক করে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যে বেতাগী উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ‘দুর্জয় বেতাগী’। [সাইদুল ইসলাম মন্টু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড