You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.11 | বেতিয়ারা যুদ্ধ (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

বেতিয়ারা যুদ্ধ (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা)

বেতিয়ারা যুদ্ধ (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) ১১ই নভেম্বর সংঘটিত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা-ফেনী অংশে অবস্থিত একটি গ্রাম বেতিয়ারা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর এ-যুদ্ধে এখানে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মঞ্জুরুল আহসান খান এ গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণকালীন ক্যাম্প কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এ বাহিনীর ২য় ব্যাচের ৭৮ জনের একটি দল প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ই নভেম্বর রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব-ক্যাম্পে পৌঁছান। ৭৮ জনের এ দলটির কমান্ডার ছিলেন ইয়াফেস ওসমান (বর্তমান সরকারের মন্ত্রী)। তিনি এ দলটিকে দুই গ্রুপে ভাগ করে জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আগে ও পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারাপারের সিদ্ধান্ত নেন। এ মহাসড়কে হানাদার বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকায় এ দলের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদেরের পর্যবেক্ষণে মহাসড়ক পারাপার নিরাপদ ভেবে তাঁরই নির্দেশনায় নিজামউদ্দিন আজাদের নেতৃত্বাধীন ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রথম দলটি বাক্সবন্দি ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ মহাসড়ক অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে হানাদার বাহিনী মহাসড়কের দুপাশে গাছের আড়ালে ভারী অস্ত্রসহ ওঁৎ পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা মহাসড়কের দিকে এগিয়ে আসতেই। হানাদারদের এম্বুশের মধ্যে পড়ে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারের মধ্যে তাঁরা
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট অস্ত্র বাক্সবন্দি থাকায় তাঁরা হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এ-যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হলেও ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন আজাদ (পিতা কামরুদ্দীন আহমেদ, ষোলঘর, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ), সিরাজুম মুনীর জাহাঙ্গীর (পিতা আলহাজ্ব দলিলউদ্দিন, ঢাকা জেলা কৃষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক), মো. বশিরুল ইসলাম ওরফে বশির মাস্টার (পিতা অলিউর রহমান, রায়পুর, নরসিংদী), জহিরুল হক ভূঁইয়া ওরফে দুদু মিয়া (পিতা তালেব হোসেন ভূঁইয়া, রায়পুর, নরসিংদী), আওলাদ হোসেন (পিতা মো. আলমাসউদ্দিন, লক্ষ্মণখোলা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ), শহীদুল্লাহ সাউদ (পিতা মো. জাবেদ আলী সাউদ, গোদনাইল, নারায়ণগঞ্জ), আবদুল কাইউম (পিতা ছানাউল্লাহ মিয়া, নীল কমল, হাইমচর, চাঁদপুর), মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (আবদুল মজিদ, আলাইরপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী) ও আব্দুল কাদের (সাতবাড়িয়া, গুনবতী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) শহীদ হন। ঘটনার ৭ দিন পর স্থানীয় লোকজন শহীদদের অর্ধগলিত লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি গণকবরে সমাহিত করে। ২৮শে নভেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের এ অঞ্চল হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন জিবুর উদ্যোগে ডা. সবুর চৌধুরী, মুজিবুর রহমান মাস্টার, আলী আকবর মাস্টার, মো. ফরাজী, আবদুল মালেক, মতি মিয়া, আতা খান, মাওলানা আবেদ আলী প্রমুখের সহায়তায় শহীদদের লাশ পুনরায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সমাহিত করা হয়। বীর শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করতে ১১ই নভেম্বর বেতিয়ারা শহীদ দিবস পালন করা হয়। শহীদদের স্মরণে গণকবরের স্থানে একটি নামফলক ও স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড