You dont have javascript enabled! Please enable it!

বেথুলী যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ)

বেথুলী যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ২৬শে অক্টোবর। কালীগঞ্জ থানা সদর থেকে ৯ কিমি পূর্বে বেথুলী গ্রাম। ১৯৭১ সালে এ এলাকার রাস্তাগুলো ছিল কাঁচা। গ্রামের পশ্চিম-উত্তর কোণে রয়েছে বৃহৎ এক বটগাছ। বটগাছটি মল্লিকপুর (সুইতলা) বটগাছ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের সময় বটগাছটির চারিপাশ ঘন বনাঞ্চলে বেষ্টিত ছিল।
বটগাছটি যেখানে অবস্থিত সে স্থানটি কয়েকটি রাস্তার সংযোগস্থল। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে সীমান্ত পেরিয়ে চৌগাছা এবং কোটচাঁদপুরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে কালীগঞ্জ থানার দুলালমুন্দিয়া-চিত্রা নদী (ইচাখালি)-বেথুলীর বটতলার পূর্বদিকে সিংড়া-আড়পাড়া (শালিখা থানা) হয়ে নড়াইল, ফরিদপুরসহ অন্যান্য স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। তাঁরা বেথুলী-মল্লিকপুর থেকে উত্তর দিকে কোলাবাজার হয়ে মাগুরাসহ অন্যান্য স্থানে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। এদিক দিয়ে বেথুলী-মল্লিকপুর গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। হাজার-হাজার শরণার্থী ভারতে যাওয়ার সময় এখানে বিশ্রাম নিত। তখন এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট ছিল কর্দমাক্ত। তাই গরুর গাড়ি ও পায়ে হেঁটেই সকলকে চলতে হতো। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধারা এবং বাংলাদেশ থেকে ট্রেনিং-এর জন্য ভারতে যাওয়ার জন্য যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা এই পথ ধরে চলাচল করতেন, তাঁদের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করত।
২৫শে অক্টোবর রাতে সহকারী থানা কমান্ডার হেলাল উদ্দীন সরদারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা এবং আবুল কাশেম নালার নেতৃত্বে বারোবাজারের অপর একটি দল মল্লিকপুর গ্রামের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও ভাষাসৈনিক বিলায়েত হোসেনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর রাজাকারদের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের নিকট পৌঁছলে ২৬শে অক্টোবর একদল পাকসেনা কালীগঞ্জ হয়ে বেথুলী গ্রামে অপারেশন চালায়। পাকিস্তানি সেনাদলের সঙ্গে তাদের সহযোগী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর তিনটি গ্রুপ ছিল। তাদের একটি পূর্বদিক থেকে যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানা হয়ে কালীগঞ্জ থানার দিঘারপাড়া ও কালারবাজারে অগ্নিসংযোগ করে ঘটনাস্থলে আসে। দ্বিতীয় গ্রুপটি বারোবাজার থেকে এবং তৃতীয় গ্রুপটি কোলাবাজার হয়ে বেথুলীতে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে মিলে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এদিকে কালীগঞ্জ থানার মুজাহিদ, আনসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী বেথুলী-মল্লিকপুর বটগাছের পূর্বদিক অতিক্রম করে বেথুলী গ্রামের উত্তরে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়। বেথুলী গ্রামের হারান বিশ্বাস (পিতা ভোলাই বিশ্বাস) এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদলের অবস্থান লক্ষ করে ভারী অস্ত্রের সাহায্যে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদল ও রাজাকার বাহিনী হতভম্ব হয়ে পড়ে। তারা তখন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন রাজাকার অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। বাকীরা পালিয়ে যায়। [মো. জুলফিকার আলী ভূট্টো]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!