বুরুঙ্গা গণহত্যা (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
বুরুঙ্গা গণহত্যা (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় ১৩ই নভেম্বর। এতে ৯ জন সাধারণ মানুষ শহীদ ও ১ জন আহত হন|
ঘটনার দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা গুনিয়াউক ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামে আক্রমণ চালায়। গ্রামটি হিন্দু প্রধান। নাসিরনগর থানা সদরের সঙ্গে বুরুঙ্গা গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল দুর্গম। তাই অক্টোবর মাস পর্যন্ত গ্রামের লোকজন অনেক ভয়-ভীতির মধ্য দিয়ে দিন কাটালেও কোনোরূপ আক্রমণের শিকার হয়নি। বরং মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা এ সময় গ্রামে নিরাপদে অবস্থান করতেন। ১৩ই নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা পায়ে হেঁটে গ্রামে প্রবেশ এবং আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর আগমন টের পেয়ে গ্রামবাসী নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য গ্রামে পালিয়ে যায়। কেউ-কেউ পার্শ্ববর্তী ধানের জমিতে লুকিয়ে ও থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা এলোপাথাড়ি আক্রমণ চালিয়ে ধানের জমি থেকে ১১ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের তারা গ্রামের সর্দারবাড়ির উঠানে এনে সারিবদ্ধভাবে বসায়। এ সারিতে সর্দারের ছেলে নিগুরবাসী দাসও ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা তাদের কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। তারা জানায় বুরুঙ্গা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর কোনো অবস্থান নেই। কিন্তু হানাদাররা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি। সর্দারের পুত্র নিগুরবাসী বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রাণ রক্ষায় সমর্থ হলেও হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা উঠানে বসা বাকি ১০ জনের ওপর গুলি চালায়। এরপর তারা বাড়িঘরে আগুন লাগায়। এতে গ্রামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তাদের গুলিতে ৯ জন শহীদ ও ১ জন আহত হন। শহীদদের মধ্যে জয় কুমার সাধু (৩৬, সাধু), ফণীন্দ্র সরকার (৪০, শিক্ষক), ধনঞ্জয় (৩০, কৃষক) এবং দুই সহোদর কমল (২০, কৃষক) ও অমূল্য (১৮, কৃষক)-র নাম জানা গেছে। [জামিল ফোরকান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড