বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী বেগম তাহিরা মাজহার আলী
বেগম তাহিরা মাজহার আলী (১৯২৪-২০১৫) পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী। তিনি ১৯২৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান পাকিস্তান) লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাহোরের কুইন মেরি কলেজে অধ্যয়ন করেন। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি শ্রমিক ও নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় সম্পৃক্ত ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং কখনোই তিনি তাঁর কার্যসম্পাদনে পিছপা হননি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করেন। পাকিস্তানে নারী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৫০ সালে তিনি Democratic Women’s Association (DWA) প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় এবং নারীর সমান অধিকারের বিষয়ে খোলাখুলি দাবি জানানো হয়। মানবাধিকার ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি ব্যয় করেন। জীবনের শেষদিকে তিনি পাকিস্তানের বিশিষ্ট নারীদের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ২০১৫ সালের ২৩শে মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তাহিরা মাজহার আলী বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে সে কারণে তাঁকে ও তাঁর লাহোরের মল রোডে এর প্রতিবাদে পাকিস্তানে পাকিস্তানে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সহকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। তিনি বিভিন্ন ফোরামে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁকে নিয়মিত ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত, কিন্তু তিনি তাঁর সত্যনিষ্ঠ কর্ম সম্পাদনে অটল ছিলেন। পাকিস্তানি হয়েও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের নৃশংসতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার তিনি একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ তাহিরা মাজহার আলী-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড