বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী বেগম নাসিম আখতার
বেগম নাসিম আখতার পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি অবিভক্ত ভারতের কাশ্মীরে (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত) জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি পাকিস্তানের ঝিলাম শহরে চলে আসেন। শামিম আশরাফ মালিকের সঙ্গে পরিণয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ঢাকায় আয়োজিত ন্যাপের জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি ২২শে মার্চ ঢাকায় আসেন। কিন্তু উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ঐ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়নি। পাকিস্তান ন্যাপ-এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঢাকা ত্যাগ করে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পূর্বে তিনি ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকায় সংঘটিত গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেন। -পাকিস্তানে বাংলাদেশের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির জন্য তিনি সাইক্লোস্টাইল মেশিনে লিফলেট ছেপে লাহোরে বিলি করতেন।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি র (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসিম আখতার ও তাঁর স্বামীসহ পাকিস্তানের ৪৪ জন বুদ্ধিজীবী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও তাঁকে মুক্তি দেয়ার দাবিতে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। তাঁর স্বামী শামীম আশরাফ মালিক ছিলেন এ বিবৃতির মূল উদ্যোক্তা। নাসিম আখতারের কাছে পাকবাহিনীর গণহত্যার বিবরণ শুনে কবি আহমদ সালিম কবিতা রচনা করে কারাবরণ করেন। তিনি ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে লাহোরের মল রোডে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে গ্রেফতার হন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাঁর (নাসিম আখতার) পুরো পরিবার ও গ্রামের পৈতৃক বাড়ির লোকজন তাঁর কারণে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বিড়ম্বনাপূর্ণ জীবনযাপন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লাহোর কারাগারে বন্দি বাঙালি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন। পাকিস্তানি হয়েও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমাপ্রার্থনার তিনি একজন দৃঢ় সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ নাসিম আখতার-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড