You dont have javascript enabled! Please enable it!

বেড়া থানা অপারেশন (বেড়া, পাবনা)

বেড়া থানা অপারেশন (বেড়া, পাবনা) পরিচালিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ অপারেশনের ফলে থানা হানাদারমুক্ত হয়।
বেড়া থানায় মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ডিসেম্বরের ২য় সপ্তাহে। ১২ই ডিসেম্বর -দিকপুর যুদ্ধএর পর মুক্তিযোদ্ধারা গুপিনাথপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। ১৩ই ডিসেম্বর সেকশন কমান্ডার শাহজান আলী এবং সেকশন কমান্ডার আব্দুল কাদের বেড়া থানা কীভাবে শত্রুমুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে গোপন বৈঠক করেন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে থানা এলাকা রেকি করিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন। ১৪ই ডিসেম্বর তিন দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা থানা ঘিরে ফেলেন এবং রাত ১২টায় আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ৩ সেকশন কমান্ডার আব্দুল কাদের, নজরুল ইসলাম এবং শাহজাহান আলী। গেরিলা কমান্ডার এস এম আমীর আলী, ইসাহাক আলী, ফেরদৌস হোসেন ফুল এবং আমজাদ হোসেন তাঁদের স্ব-স্ব গেরিলা নিয়ে থানা অপারেশনে অংশ নেন। মো. শাহজাহান আলীর হাতে সব সময় ভারী অস্ত্র থাকত এবং তিনি এলএমজি ম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁর দল নিয়ে থানার মেইন গেট থেকে মাত্র ৩০ গজ দূরে অবস্থান নেন। তিনি এলএমজিটি থানার দিকে তাক করে রাখেন। ১৫ জন গেরিলা নিয়ে কমান্ডার ইসাহাক আলী বেড়া হাসপাতাল ব্রিজে অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল থানা থেকে পাকবাহিনী পলায়ন করলে তাদের ওপর আক্রমণ করা। কমান্ডার এস এম আমীর আলী এবং ফেরদৌস হোসেন ফুল তাঁদের দল নিয়ে থানা অবরোধ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা থানায় অবস্থানরত পাকসেনা ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তারা আত্মসমর্পণে রাজি না হয়ে গুলিবর্ষণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে পরাজিত হয়ে পাকসেনারা বাঘাবাড়ি এবং নগরবাড়ি ঘাটের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। ১৫ই ডিসেম্বর বাঘাবাড়ি ও নগরবাড়িতে ভারতীয় মিত্রবহিনীর বিমান থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়। মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণে বাঘাবাড়ি ও নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে সেনা পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখানে বোমার অঘাতে শতশত পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতার হাতেও অনেকে প্রাণ হারায়। পলায়নরত পাকসেনাদের পেট্রোল বোমার আঘাতে কমান্ডার ফেরদৌস হোসেন ফুল আগুনে দগ্ধ হন। পাবনার কোনো-কোনো থানা ১৮ ও ২০শে ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হলেও ১৬ই ডিসেম্বর বেড়া থানা অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং এদিনই থানা শত্রুমুক্ত হয়। বেড়ায় আলবদর বাহনীর শক্তিশালী অবস্থান থাকায় থানায় অনেক রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী সার্বক্ষণিক পাকবাহিনীর সঙ্গে থাকত। থানা দখলের পর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। অনেকে পালিয়ে যায়। ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা থানার নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!