বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা
বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা (১৯১৪-১৯৮২) নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বি পি কৈরালা নামেও পরিচিত। তিনি ১৯১৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের বেনারসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীকালে হরিশচন্দ্র বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩২ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৩৪ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেস দলে যোগদান করেন। ১৯৩৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি বেশ কয়েক বছর দার্জিলিংয়ে আইন অনুশীলন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৯৪২- ৪৪ সাল পর্যন্ত অন্তরীণ ছিলেন। তিনি ভারতে অবস্থান করে ১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে সমাজতান্ত্রিক নেপালি কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ১৯৫০ সালের এপ্রিলে নেপালি কংগ্রেস দলে পরিণত হয়। ১৯৫১ সালে ৯ মাসের জন্য তিনি নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নেপালি কংগ্রেস দলের সভাপতি হিসেবে ১৯৫২-৫৬ সাল এবং ১৯৫৭-৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ সালে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে তাঁর দল বিপুল ভোটে জয়ী হয় এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৫৯ সালের ২৭শে মে থেকে ১৯৬০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য ক্ষেত্রেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। তিনি ছিলেন নেপালি সাহিত্যের সবচেয়ে চিন্তাশীল লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি নেপালি ভাষায় অনেক ছোটগল্প, কবিতা ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি ১৯৮২ সালের ২১শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা বি পি কৈরালা বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যের জন্য ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা-কে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড