বিষয়খালি ব্রিজ যুদ্ধ (ঝিনাইদহ সদর)
বিষয়খালি ব্রিজ যুদ্ধ (ঝিনাইদহ সদর) সংঘটিত হয় ১লা এপ্রিল। এতে কিছুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া পাকসোনাদের গুলিতে বহু সাধারণ মানুষ মারা যায়। ঝিনাইদহ শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে যশোর- ঝিনাইদহ মহাসড়কে বিষয়খালি নামে একটি বাজার রয়েছে। এ বাজারের মধ্য দিয়ে বেগবতী নদী প্রবাহিত। নদীর ওপর অবস্থিত ব্রিজটি বিষয়খালি ব্রিজ নামে পরিচিত। যশোর ক্যন্টনমেন্ট থেকে পাকহানাদার বাহিনী যাতে ঝিনাইদহে প্রবেশ করতে না পারে, সে-লক্ষ্যে ২৭শে মার্চ চুয়াডাঙ্গার ইপিআর সদর দফতর ও ঝিনাইদহ সংগ্রাম পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বিষয়খালি ব্রিজের উভয় পাশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। পুলিশ, আনসার ও মুক্তিকামী মানুষ এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ২৮শে মার্চ এক কোম্পানি ইপিআর সদস্য নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ইপিআর-এর ৪নং উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এ প্রতিরোধযুদ্ধে যোগদান করেন। পাকসেনাদের প্রতিরোধকল্পে মুক্তিকামী জনতা বিষয়খালি ব্রিজের ক্ষতিসাধন এবং বেগবতী নদীর দক্ষিণ তীরে বড়বড় গাছের গুঁড়ি কেটে ব্যারিকেড তৈরি করে।
১লা এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যশোর ক্যন্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝিনাইদহের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে তারা বিভিন্ন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। সামনে যাকে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে। বিষয়খালি ব্রিজের কাছে এসে পাকসেনারা গাছের গুড়ির ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং রাস্তার দুদিকের বস্তিগুলোতে আগুন দেয়। তারা রাজনগর কে বি হাইস্কুলের শিক্ষক মায়াময় ব্যানার্জীকে বাড়ির সামনে থেকে ধরে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। তাদের গুলিতে পার্শ্ববর্তী গ্রামের নুরুল মুন্সী ও নলিন গোসাইসহ ১৪ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। এরপর পাকসেনারা ব্রিজের কাছে আসতেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ শুরু হয়।
বেগবতী নদীর অপর পাশে অবস্থানরত ইপিআর-এর প্রতিরোধযোদ্ধারা তখন খাবার খাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। সারাদিন ধরে যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনী বেগবতী নদী অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পিছু হটে যশোর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যায়। যুদ্ধে কিছুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা রাস্তার দুধারে অবস্থিত গ্রামের জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে। তারা মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম এমএনএ-এর পুত্র এনামুল হক আলেকজাণ্ডারকে হত্যা করে। বিষয়খালী যুদ্ধে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা (ইপিআর সদস্য) শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। শহীদদের স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [মীর ইউসুফ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড