You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীরমোহন গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর)

বীরমোহন গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ৪ঠা ডিসেম্বর। ৩রা ডিসেম্বর মোস্তফাপুর-বরিশাল কর্ণপাড়া-পান্তাপাড়া-পাথরিয়াপাড় যুদ্ধএর পরের দিন এলাকার কুখ্যাত আলবদররা ১৫ জন নিরীহ মানুষকে বীরমোহন স্কুলের সামনে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ৩রা ডিসেম্বর সারাদিন পান্তাপাড়া-কর্ণপাড়া ব্রিজে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এ মহাসড়কে পাকসেনাদের গতিপথ সফলভাবে রোধ করতে সক্ষম হন। পাকিস্তানি সেনাদল বাধা পেয়ে সেদিন মাদারীপুর ক্যাম্পে ফিরে যায়। পাকসেনারা ফিরে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হাকিম তালুকদার নিশ্চিত ছিলেন যে, পাকিস্তানি সেনারা পরদিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে বরিশালে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তাই খুব ভোর থেকে তিনি একটি দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে পান্তাপাড়া-কর্ণপাড়া ব্রিজের পাশে বাংকার খুঁড়ে ওঁৎ পেতে থাকেন। কিন্তু বেলা ২টা পর্যন্ত পাকসেনারা না আসায় তিনি এম্বুশ তুলে ডাসার ক্যাম্পে সদল ফিরে যান। মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাবার কিছুক্ষণ পর উত্তর দিকের ইটের পুলের রাস্তা ধরে কিছু যুবক সেখানে যায়। তারা ছিল জামায়াতে ইসলামী-র কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর সদস্য। তাদের প্রত্যেকের গায়ে চাদর জড়ানো ছিল। চাদরের নিচে লুকানো ছিল স্টেনগান। মহাসড়কের পাশে পাথরিয়াপাড় বাজারের মোড়ে এসে তারা চাদরের নিচে লুকানো অস্ত্র বের করে। নিজেদের তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে লোকদের জড়ো করে। তারপর জড়ো হওয়া লোকদের বেঁধে বীরমোহন স্কুলের সামনে বটতলায় নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। এ-সময় তারা নিজেদের আসল পরিচয় প্রকাশ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় আছে তা জানতে চায়। তারা মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় তা জানে না বলার সঙ্গে-সঙ্গে আলবদররা ব্রাশফায়ার করে। এক সঙ্গে ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ১৫টি লাশ জড়াজড়ি করে অনেকক্ষণ পড়ে থাকে। সন্ধ্যার পর আত্মীয়-স্বজনরা এসে লাশগুলো বাড়ি নিয়ে যায়।
বর্তমানে এখানে কাজী বাকাই ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। এ সংগঠনের উদ্যোগে একটি বোর্ডে শহীদদের নাম লেখা রয়েছে। এভাবে বীরমোহনে শহীদদের স্মৃতিরক্ষার চেষ্টা করা হয়। বীরমোহনের শহীদরা হলেন- নাজিম উদ্দিন দেওয়ান (গোসাইরহাট, শরীয়তপুর), আবদুস সাত্তার হাওলাদার (পূর্ব মাইজপাড়া), সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (পূর্ব মাইজপাড়া), শংকর চন্দ্র শীল (পূর্ব মাইজপাড়া), সন্তোষ কুমার শীল (পূর্ব মাইজপাড়া), মুনসুর আলী খান (পূর্ব মাইজপাড়া), এস্কান্দার আলী খান (পূর্ব মাইজপাড়া), মাণিক চৌধুরী (পূর্ব মাইজপাড়া), হরিবর বাড়ৈ (পূর্ব মাইজপাড়া), আবদুর রশিদ চৌধুরী (পূর্ব মাইজপাড়া), ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (পূর্ব মাইজপাড়া), আহম্মদ আলী সরদার (দক্ষিণ ধূয়াসার), জ্যোতিন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (দক্ষিণ ধূয়াসার), খবির উদ্দিন বেপারী (দক্ষিণ ধূয়াসার) ও নিরঞ্জন শীল (ধ্বজী)। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!