বুড়িগঙ্গা নদীর তীর বধ্যভূমি (ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ)
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর বধ্যভূমি (ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ) ফতুল্লা উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ফাজেলপুরে অবস্থিত। পাকিস্তানি বাহিনী ইপিআর সৈনিকসহ শতশত মানুষকে ধরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফাজেলপুর তেলের ডিপো ক্যাম্পে এনে হত্যা করত। হত্যা শেষে নিহতদের লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিত।
পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় অবাঙালি রাজাকারদের সহায়তায় ২৭শে মার্চ পাকিস্তান ন্যাশনাল তেলের ডিপোতে (বর্তমান যমুনা অয়েল মিল) ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৭শে মার্চ থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থানকালে শতশত ইপিআর সৈনিককে চোখ-হাত-পা বেঁধে ট্রাকে করে এখানে নিয়ে আসত। এরপর ৮-১০ জন ইপিআর সৈনিককে একসঙ্গে বেঁধে রাতের অন্ধকারে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ন্যাশনাল তেলের ডিপোর পুরাতন জেটির অগ্রভাগে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত। কখনো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একজনের কোমরের সঙ্গে আরেকজনের কোমর দড়ি দিয়ে বেঁধে এক সঙ্গে ১০-১৫ জনকে বুড়িগঙ্গা নদীতে হাঁটু পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করত। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করে পাকিস্তানি সেনারা নিহতদের লাশগুলো বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিত। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দিনের পর দিন তারা এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এছাড়া পাকিস্তানি সেনারা ফাজেলপুরের রাস্তায় যানবাহন থামিয়ে পুরুষ যাত্রীদের নামিয়ে তাদের ধরে এ ক্যাম্পে এনে হাত-পা-চোখ বেঁধে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত। হত্যার পর নিহতদের লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা গ্রামবাসীদের ধরে এনে ৫-৬ জনকে এক-একটি দলে ভাগ করে বুড়িগঙ্গা নদীর হাঁটু পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করত। বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী নৌকা দেখলেই তারা পাকিস্তান ন্যাশনাল তেলের ডিপোর জেটির পাশে তাদের নিরাপত্তা কক্ষ থেকে গুলি করে যাত্রীদের হত্যা করত। এভাবে তারা এ স্থানটিকে একটি বধ্যভূমিতে পরিণত করে। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড