You dont have javascript enabled! Please enable it! বিরিশিরি বধ্যভূমি (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা) - সংগ্রামের নোটবুক

বিরিশিরি বধ্যভূমি (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা)

বিরিশিরি বধ্যভূমি (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা) নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।
পাকহানাদার বাহিনী ৩০শে এপ্রিল দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে বিরিশিরির সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে হত্যা করে। তাই এ স্থান বিরিশিরি বধ্যভূমি নামে পরিচিতি পায়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক স্বনামখ্যাত মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা এখানে হত্যা করে। ২৬শে জুলাই -নাজিরপুর যুদ্ধএর পর পাকিস্তানি সেনারা জ্যা বক্স, মেরাজ আলী, সেকান্দর আলী, তাহের আলী, ইজ্জত আলী, শাহেদ আলীসহ অনেককে ধরে এনে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে হত্যা করে। ১২ই আগস্ট নেত্রকোনা কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আরজ আলীকে পাকবাহিনী কলেজ হোস্টেল থেকে আটক করে। কয়েকদিন বিরিশিরি ক্যাম্পে বন্দি রেখে তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে আরজ আলীকে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। একই বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় দুর্গাপুর এম কে সি এম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ আওয়ালকে। এলাকার বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তি গৌরাঙ্গ সাহা (পুরাকান্দুলিয়া)-কে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দুর্গাপুরের কুলগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেনও শহীদ হন বিরিশিরি বধ্যভূমিতে। ময়মনসিংহ-জারিয়াগামী ট্রেন থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘাগড়া হাইস্কুলের শিক্ষক সরুজ আলী, রফিকুল ইসলাম ও তাঁদের সঙ্গে থাকা যুবক মোকশেদ আলী তালুকদারকে ধরে নিয়ে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। শহিদ মিয়া (বহেরাতলী), আবু মণ্ডল (উদয়পুর), আব্দুল লতিফ (কাকৈরগড়া), মাখন মাস্টার (গাঁওকান্দিয়া), জালাল মাস্টার (কাকড়াকান্দা), সতীশ বর্মণ (নগুয়া), নিতাই বৰ্মণ (শরিশুলা), আছমত খাঁ (রামকান্দা) ও তার ছেলে লাল খাঁ, বিল্লাল হোসেন (রামকান্দা; কলেজ ছাত্র), দিলদার হোসেন (রামকান্দা), অতুলেশ্বর সান্যাল (নাগেরগাতি) আব্দুল আজিজ (সালুয়ারকান্দা) ও আব্দুল গণি (সালুয়ারকান্দা)-কে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। এছাড়া গাঁওকন্দিয়া গণহত্যার পূর্বে গাঁওকন্দিয়ায় পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ ও ২ জনকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তালে হোসেন (ছোটুনি)-কে দালাল জলিল চেয়ারম্যানের সহায়তায় ধরে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। বিরিশিরি বধ্যভূতিতে নিহতদের স্মরণে সেখানে নামসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [জুলফিকার আলী শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড