You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিয়াঘাট গণহত্যা (গুরুদাসপুর, নাটোর)

বিয়াঘাট গণহত্যা (গুরুদাসপুর, নাটোর) সংঘটিত হয় ১৫ই জুলাই। পাকহানাদার বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৫৭ জন নিরীহ মানুষ এ গণহত্যার শিকার হন।
বিয়াঘাট গুরুদাসপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নন্দকুজা নদী। এ ইউনিয়নে অনেকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে এবং এলাকাবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করছে এ মর্মে পাকহানাদার বাহিনীর নিকট সংবাদ ছিল। এপ্রিলে নাটোরে হানাদার বাহিনী প্রবেশ করলে বহু মানুষ এখানে আশ্রয় নেয়। তাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও ভারতের দালাল সন্দেহ করে জোরপূর্বক হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। ধারণা করা হয়, তাদের হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এরপর মে মাস ও আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বেশ কয়েকবার হানাদাররা এ গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। ১৫ই জুলাই তারা এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। বদর খাঁ, মোন্তাজ, মোকসেদ প্রমুখ বিহারি ও বাঙালি দালালদের সাহায্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদিন এ এলাকায় প্রবেশ করে। এখানে কমপক্ষে ৫৭ জনকে হত্যা করার কথা জানা যায়। তাদের হত্যার পর নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় বলে নিহতদের সঠিক সংখ্যা ও সকলের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
১৫ই জুলাই দুপুর ১২টার দিকে পাকহানাদার বাহিনী বিয়াঘাট ইউনিয়নে অনুপ্রবেশ করে। নন্দকুজা নদীর অপর পাড়ে মিলিটারি এসেছে শুনে গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে পালাতে থাকে। অনেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। বিয়াঘাট গ্রামের ছহির উদ্দিনকে প্রথমে হানাদাররা ধরে ফেলে। এরপর তার ছোট ছেলে আফাজ উদ্দিনসহ পাশের বাড়িগুলো থেকে আরো ৩০ জনকে তুলে আনে। তাদের মধ্যে অন্য গ্রাম থেকে মাটি কাটতে আসা শ্রমিকরাও ছিল। আরো কয়েকজনকে ধরে এনে মোট ৩৩ জনকে একত্রে ছহির উদ্দিনের বাড়িতে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর লাশগুলো নন্দকুজা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া আরো ২৪ জনকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। ঐদিনের গণহত্যার যারা শিকার তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- আফাজ উদ্দিন (পিতা জহির উদ্দিন, বিয়াঘাট; কৃষক), রিয়াজ উদ্দিন মুন্সি (পিতা বসির উদ্দিন, বিয়াঘাট; দিন মজুর), কায়েম উদ্দিন (পিতা কালিমুদ্দিন প্রামাণিক, বিয়াঘাট; কৃষক), হাকিম উদ্দিন প্রামানিক (পিতা ফাদিল প্রামাণিক, বিয়াঘাট; কৃষক), আসকান আলী (পিতা আফুস্য, নারায়ণপুর; শ্রমিক), আহমেদ আলী ফকির (পিতা মছের ফকির, উত্তর নারিবাড়ী; শ্রমিক), যদু শেখ (পিতা হাছান আলী, হামলাইকোল; শ্রমিক) ও কার্তিক। নিহতদের স্মরণে গুরুদাসপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [সুমা কর্মকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!