বাহ্রা-কোমরগঞ্জ যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)
বাহ্রা-কোমরগঞ্জ যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) ২৯শে সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং এক পর্যায়ে বাকিরা ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
গালিমপুর যুদ্ধের (২৩-২৭শে সেপ্টেম্বর) স্থান পরিদর্শন ও পাল্টা আক্রমণের জন্য ঢাকা ও নবাবগঞ্জ থেকে ৫টি লঞ্চযোগে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য কোমরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছায়। এ খবর জানতে পেরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তাঁরা সংগঠিত
হয়ে কোমরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেন। ২৯শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকার সদরঘাট থেকে রওনা করে নবাবগঞ্জে আসার পথে বাহার পুরাতন খালের উত্তর পাশে ২টি লঞ্চ থেকে নেমে কোমরগঞ্জের দিকে এগিয়ে যায়। বাকি ৩টি লঞ্চে তারা কোমরগঞ্জের নিকট পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধা সিপাহি মোহাম্মদ জসিমের গুলিতে একজন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শওকত হোসেন আঙ্গুর ও রাহাত আলী এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধে ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে কমান্ডার শওকত হোসেন আঙ্গুর, কমান্ডার সুবেদার রাহাত আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, শাহ মো. আবু বকর সিদ্দিক, লুৎফর রহমান মোল্লা, ফজলুল হক মোল্লা, আব্দুল মজিদ, নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ দারু, মো. শাকিল, জয়নাল আবেদিন, এলবার্ট গমেজ, মোহাম্মদ জালাল, হাবিব, নাসির খান, ইসহাক আলী, মাসুদ, মন্টু, পল্টু, হারুণ, মোতাহার প্রমুখের নাম উল্লেযোগ্য। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যবাহী এম এল রিজিয়া খাতুন ও এম এল মীরা লঞ্চ দুটি গুলি করে বাহার খালে ডুবিয়ে দিলে অন্য লঞ্চগুলো আর সম্মুখে অগ্রসর হতে পারেনি। বাহ্রা খালের পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ে রাহাত আলীর নেতৃত্বে ইছহাজ আলী, মোহাম্মদ জালাল, হারুন, হাবিব, জয়নাল, মাসুদ, পল্টু, মন্টু প্রমুখ পজিশন নিয়ে হানাদারদের লঞ্চ বরাবর গুলি চালাতে থাকেন। অপরদিকে কমান্ডার শওকত হোসেন আঙ্গুরের নেতৃত্বে বাহ্রা বাজার ঘাট অর্থাৎ উত্তর দিক থেকে আবুল কালাম আজাদ দারু শাহ মো. আবু বকর সিদ্দিক, এলবার্ট, মোতাহার, মো. শাহজাহান, লুৎফর রহমান মোল্লা, নজরুল, ফজলুল হক মোল্লা, আব্দুল মজিদ প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে পাকসেনাদের লঞ্চগুলোকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকেন। পাকসেনারা তাদের ভারী অস্ত্র দিয়ে খালের দুই পাড়ে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ ও শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সারাদিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। অবশিষ্ট হানাদার সৈন্যরা লঞ্চযোগে ঢাকার দিকে দ্রুত পলায়ন করে। [মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মালেক সিকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড