মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য বিজয় ‘৭১ (ময়মনসিংহ সদর)
বিজয় ‘৭১ (ময়মনসিংহ সদর) ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান চিরভাস্বর করে রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে এটি নির্মিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৪ঠা মার্চ পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুর রহিম ও আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে উপাচার্য সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের অনেকে শহীদ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন- এ বি এম আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া (সহকারী অধ্যাপক), নাজমুল আহসান, বীর প্রতীক (৫ম বর্ষের ছাত্র), মো. জামাল হোসেন (ছাত্র), মো. আক্কাস আলী (কর্মচারী), মধুসূদন (কর্মচারী), মো. নাজির আখতার কাশেম (ছাত্র), মো. আব্দুল মতিন খন্দকার টিপু (ছাত্র), মো. হাবিবুর রহমান (ছাত্র), মো. আবুল কাশেম (ছাত্র), মো. খুরশীদ আলম শিবলী (ছাত্র), মো. শামসুল হক তালুকদার (ছাত্র), মো. নূরুল হক (কর্মচারী), কাজী মো. মঞ্জুর হোসেন (ছাত্র), মো. গাজী ওয়াহিদুজ্জমান (কর্মচারী), মো. হাসান আলী (কর্মচারী), মো. ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল (ছাত্র), মো. মনিরুল ইসলাম আকন্দ (ছাত্র) ও মো. গিয়াস উদ্দিন (কর্মচারী)।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে যৌথবাহিনী ময়মনসিংহ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যৌথবাহিনীর অগ্রযাত্রায় প্রথমদিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত হয়। বিজয়ের এ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৯৮ সালে বিজয় ‘৭১ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। এ ভাস্কর্যটি যেদিক থেকেই দেখা হয় সেদিকই সামনের দিক বলে প্রতীয়মান হয়। ভাস্কর্যে আছে অস্ত্রহাতে একজন যুবতি, তার বাঁ পাশে একজন ছাত্র-যুবকের এক হাতে রাইফেল অন্য হাতে গ্রেনেড এবং আর এক পাশে গণযোদ্ধা কৃষকের মুষ্টিবদ্ধ হাতে রাইফেলের অগ্রভাগে বাংলাদেশের পতাকা। এসবের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নারী, ছাত্র-যুবক ও কৃষকের অংশগ্রহণ প্রতীকী রূপ পেয়েছে। শহীদ নাজমুল আহসান, বীর প্রতীকের নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে। [বিমল পাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড