You dont have javascript enabled! Please enable it! বিজয় কেতন ও অন্যান্য স্থাপনা (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট) - সংগ্রামের নোটবুক

বিজয় কেতন ও অন্যান্য স্থাপনা (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট)

বিজয় কেতন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি জাদুঘর। এটি ঢাকা সেনানিবাসের নক্ষত্র ভবন সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এর দক্ষিণ পাশ দিয়ে পূর্ব দিকে শহীদ বাশার রোড এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণমুখী শহীদ সরণি। পশ্চিম- উত্তরমুখী রোডের পশ্চিম পাশে সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার্স মেস ও কেন্দ্রীয় সেনাগ্রন্থাগার অবস্থিত। দুই রোডের সংযোগস্থল থেকে এ জাদুঘরের ক্যাম্পাস শুরু। এটিকে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি কমপ্লেক্স। এর বহিরাঙ্গণ ও ভেতরে একাধিক স্থাপনা রয়েছে। বহিরাঙ্গণের উত্তরদিকে ‘সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা’ নামে একট টেরাকোটা এবং দক্ষিণ-পূর্ব সড়ক সংলগ্ন স্থানে ‘আলোর প্রতিধ্বনি’ নামে একটি ম্যুরাল রয়েছে। এ দুটি শিল্পকর্মে ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি, যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, জয় বাংলা স্লোগান, পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়োল্লাস ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। কমপ্লেক্সের বহিরাঙ্গণের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে ‘বিজয় কেতন’ নামে একটি ভাস্কর্য। এর শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। এ ভাস্কর্যে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি রয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক নারীযোদ্ধার মুষ্টিবদ্ধ হাতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত উড্ডীয়মান পতাকা। ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার হাতে রয়েছে শত্রুর বিরুদ্ধে তাক করা বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র। উল্লেখ্য, এ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে নিয়মিত সেনাসদস্যের পাশাপাশি গ্রামবাংলার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন।
বিজয় কেতন জাদুঘরের অভ্যন্তরে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন ও সরকারের শপথ গ্রহণ, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, বিভিন্ন কক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের পরিচিতি, সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা, বেশ কয়েকটি বড় যুদ্ধ— যেমন কালুরঘাট ব্রিজ যুদ্ধ, কালুরঘাট কৃষি ভবন দখলের লড়াই, মহালছড়ি যুদ্ধ, বিলোনিয়া যুদ্ধ, সালদা নদী যুদ্ধ, মনতলা লড়াই, ছাতক অপারেশন, দর্শনা যুদ্ধ, মাটিকাটায় জাহাজমারা যুদ্ধ, কোদালকাঠি যুদ্ধ, নকশি আক্রমণ, কামালপুর যুদ্ধ, হেঁয়াকোর লড়াই, মদ রেইড, চট্টগ্রাম বিদ্রোহ, রংপুর-দিনাজপুর-সৈয়দপুর ইত্যাদি বর্ণনাসহ স্থান পেয়েছে। একটি কক্ষে হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ-এর কফিন সংরক্ষিত রয়েছে। অপর একটি কক্ষের দেয়ালে ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুন-এর গেরিলাযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য ও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের বর্ণনা রয়েছে। একটি কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সংরক্ষিত আছে।
বিজয় কেতনের অভ্যন্তরে যে-কক্ষটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সর্বাধিক, সেটি হলো আইয়ুব শাসন আমলে ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’ শিরোনামে (যা সে সময়ে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে অধিক পরিচিত ছিল) দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচারের এজলাশ। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ৩ বিচারপতির ঊর্ধ্বে ডানদিকে কাঠদিয়ে ঘেরা স্থানে রয়েছে ৩৫ জন অভিযুক্তের জন্য নির্দিষ্ট করা ৩৫টি আসন। সম্মুখ সারির প্রথম চেয়ারটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য নির্ধারিত। এজলাশের বামদিকে আইনজীবীদের জন্য খোলা জায়গায় সারিবদ্ধ বেশকিছু চেয়ার। এজলাশের বামদিকের দেয়ালে ৩৫ জন অভিযুক্তের ছবি সাঁটানো রয়েছে। এর মধ্যে সর্বঊর্ধ্বে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।
৬ই জুলাই ১৯৯৯ সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, বীর বিক্রম বিজয় কেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০০ সালের ২১শে নভেম্বর এর শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যান্য স্থাপনা
বিজয় কেতন কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব সড়কের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ পূর্বদিক থেকে সেনানিবাস এলাকার প্রবেশদ্বারে ‘সমুন্নত স্বাধীনতা’ নামে একটি সুউচ্চ তোরণ এবং তার স্তম্ভ জুড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনাসদস্যদের নাম উৎকীর্ণ রয়েছে। সেনানিবাসে প্রবেশের দক্ষিণ দ্বারে রয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেইট’। এর নিকটবর্তী স্থানে বিমান বাহিনীর ঘাটির নাম মুক্তিযুদ্ধের ৬নং সেক্টর কমান্ডার ও বিমান বাহিনী প্রধান খাদেমুল বাসারের নাম অনুসারে ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাটি বাসার’ করা হয়েছে। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ সৈনিকদের নামে একাধিক স্মারক ভাস্কর্য ও সড়ক রয়েছে।
এছাড়া সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রাস্তা সংলগ্ন স্থানে রয়েছে সর্বক্ষণ প্রজ্জ্বলিত ‘শিখা অনির্বাণ’। [হারুন-অর-রশিদ] তথ্যসূত্র: ‘বিজয় কেতন’ জাদুঘর থেকে লেখক কর্তৃক সংগৃহীত

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড