বাশিয়া বাজার ক্যাম্প আক্রমণ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)
বাশিয়া বাজার ক্যাম্প আক্রমণ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) ১লা সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এ আক্রমণের ফলে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায় এবং সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য টাঙ্গাবরের মাইজউদ্দিন ফকির শহীদ হন। গফরগাঁও উপজেলার একেবারে দক্ষিণ দিকে বাশিয়া গ্রামের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকাররা বাশিয়া হাইস্কুলে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি স্থাপন করে। ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইকবাল-ই-আলম কামাল কোম্পানির যোদ্ধারা বাশিয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ ও দখল করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু অপকর্মের কেন্দ্র ছিল এই ক্যাম্প। দক্ষিণ গফরগাঁও অঞ্চলে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও নির্যাতনে এ ক্যাম্পের কোনো-না-কোনো যোগসাজশ থাকায় মুক্তিযোদ্ধাগণ একে দখলে নিতে বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। ১লা সেপ্টেম্বর দক্ষিণ হাড়িনাতে বসে ইকবাল-ই-আলম কোম্পানির গ্রুপ কমান্ডার কামালের নেতৃত্বে বাশিয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা মোমিন রাজাকার ক্যাম্পের অবস্থান দেখে আক্রমণ করার অগ্রবর্তী রাস্তা নির্ধারণ করেন। তিনি প্রয়োজনীয় রেকি সম্পন্ন এবং রাজাকার ক্যাম্পের ডায়াগ্রাম তৈরি করেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পাহারা দেয়ার জন্য থেকে যান। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা শেষ রাতে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিক থেকে গেরিলা পদ্ধতিতে বাশিয়া স্কুল রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। দুদিন বিরামহীনভাবে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধকালে গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের পিঠা, চিড়া, মুড়ি, গুড় ইত্যাদি শুকনো খাবার এবং খাবার পানি সরবরাহ করে। দুদিন যুদ্ধ চলার পরও পাকিস্তানি বাহিনী পিছু না হটায় গ্রুপ কমান্ডার ফাইটিং কমান্ডার ও অপর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেন। সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা হলেন— লামকাইনের জব্বার ১, আব্দুল আজিজ, সালাম, বারইগাঁওয়ের আকাশ, নিজাম, হেলাল, বিরই এর জব্বার ২, বারইহাটির হেলাল, টাঙ্গাবরের নিজাম, মাইজউদ্দিন, রশিদ, শাহাবউদ্দিন ও ছাপিলার গিয়াসউদ্দিন। সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা ৯টি এলএমজি ১৫ ফুটের মধ্যে মাটি থেকে মাত্র ১ ফুট ওপর বসিয়ে তা থেকে ক্রমাগত ব্রাশফায়ার করতে থাকেন। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর রাজাকার ক্যাম্প থেকে গুলি কমে আসায় মুক্তিযোদ্ধারা সাহস করে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে রাজাকারদের গ্রেফতার করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে রাজাকারদের ফ্রন্ট সাইডে রেখে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়। অপরদিকে সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য টাঙ্গাবরের মাইজউদ্দিন ফকির শহীদ হন। এ যুদ্ধ থেকেই মুক্তিযোদ্ধা মুঞ্জুর কাদের ইকবাল-ই-আলম কামাল কোম্পানিতে ফাইটিং কমান্ডার হিসেবে যুক্ত হন।
রাজাকারদের শক্তিশালী এ ঘাঁটি আক্রমণে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- যাত্রাসিদ্দি গ্রামের মো. আকবর হোসেন ওরফে চান মিয়া, মো. সোহরাব উদ্দিন, মো. আলাউদ্দিন, মো. ঈসমাঈল, মো. জহিরুল হক ওরফে চান মিয়া, বারইগাঁও গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন, মো. ছালাউদ্দিন, মো. আব্বাস আলী, মো. মুজিবুর রহমান, মো. সোহরাব উদ্দিন, মো. শামছুদ্দীন, মো. তারা মিয়া, মো. ফজলু মিয়া, বিরই গ্রামের মো. আব্দুস খালেক, মো. ফজলুল হক, মো. সিরাজ মিয়া, মো. আবুল হোসেন, মো. জসীম উদ্দিন, এডভোকেট হারাধন বাবু, মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুল জব্বার, মো. আব্দুস সোবহান, মো. আব্দুল খালেক, মো. আ. মোতালিব, টাংগার গ্রামের মো. গিয়াসউদ্দিন, মো. ইউসুফ আলী, মো. আবু সাঈদ, মো. ইসহাক, মো. ফজলুর রহমান প্রমুখ। [নিপা জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড