বাহাদুরপুর গণহত্যা (যশোর সদর)
বাহাদুরপুর গণহত্যা (যশোর সদর) সংঘটিত হয় ১৮ই এপ্রিল। এতে ২৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। সাধারণ জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা ২৮শে মার্চ থেকে কয়েকদিন যশোর সেনানিবাস আবরোধ করে রাখে। এর প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনী যশোর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় বাহাদুরপুর গণহত্যা। বাহাদুরপুর যশোর সদর উপজেলার একটি গ্রাম। এখানকার অধিবাসীরা ছিল কৃষিজীবী ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাদের অপরাধ ছিল তারা ৭০-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল।
১৮ই এপ্রিল যশোর সেনানিবাস থেকে কয়েক গাড়ি পাকসেনা বাহাদুরপুর গ্রামে যায়। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় বিহারিরা। সকাল ৮টার মধ্যে হানাদার বাহিনী সারা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। গ্রামবাসীরা যে যেখানে পেরেছে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। কিন্তু ২৮ জন গ্রামবাসী হানাদারদের হাতে ধরা পড়ে। হানাদাররা তাদের একত্র করে হাত বেঁধে কামারবাড়ি জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রথমে বেধড়ক পেটানো হয়। জনৈক পাকিস্তানি মেজর বন্দিদের কাছে জানতে চায় তারা বাঙালি না বিহারি। বন্দিরা একসঙ্গে বলে তারা মুসলমান। তখন মেজর চিৎকার করে বলে বাঙালি কখনো মুসলমান হয় না। অতঃপর মেজরের নির্দেশে কয়েকজন সেনাসদস্য বন্দিদের রাইফেল দিয়ে পেটায় এবং গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই ২৪ জন শহীদ হন। ৪ জন বেঁচে যান। তাঁরা হলেন লুৎফুর রহমান, মনসুর আলি, নওসের আলি ও আবদুল ওয়াহাব।
বাহাদুরপুর গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে ১৮ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন আবুবকর সিদ্দিক, ওসমান আলি, ওহেদুল হক, খোকন মিয়া, মকবুল মিয়া, মহিউদ্দিন, নুর বকস, আনোয়ার হোসেন, আমিনউদ্দীন, হানিফ মিয়া, কাওছার আলি, হাকিম আলি, আবদুস সামাদ, মকসেদ আলি, সফর আলি, ইউনুস আলি, হামিদুল হক ও রুহুল আমিন। শহীদদের স্বজনরা লাশগুলো সমাহিত করার ব্যবস্থা করে। গ্রামের প্রবেশপথে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৮ই এপ্রিল শহীদের স্বজনরা এখানে এসে ফুল দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড