You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.02 | বাহাদুরপুর-কলাগাছিয়া-চৌহদ্দি গণহত্যা (মাদারীপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

বাহাদুরপুর-কলাগাছিয়া-চৌহদ্দি গণহত্যা (মাদারীপুর সদর)

বাহাদুরপুর-কলাগাছিয়া-চৌহদ্দি গণহত্যা (মাদারীপুর সদর) সংঘটিত হয় ২রা নভেম্বর। এতে শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
মাদারীপুর সদর থানার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর, কলাগাছিয়া ও চৌহদ্দি গ্রামের গণহত্যার আগের রাত ৮টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘটকচর হাইস্কুলে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা স্কুল ভবনের এক পাশের দেয়াল ভেঙ্গে ভবনে ঢুকে ব্রাশ ফায়ার করলে ১০-১২ জন রাজাকার নিহত হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ এবং ৮ জন রাজাকারকে ধরে তাঁরা ভোর রাতে কমলাপুর- কলাগাছিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ফিরে আসেন। কিন্তু সকালে পাকসেনারা মস্তফাপুর বড় ব্রিজ, কলাবাড়ি ও সমাদ্দার ব্রিজ – এই তিন দিক থেকে একযোগে কলাগাছিয়া ও কমলাপুরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি ক্যাম্পে আক্রমণ করে। মাদারীপুর ও টেকেরহাটের উভয় ঘাঁটি থেকে আসা পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা এ আক্রমণে অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত নৌকাযোগে লখণ্ডা বিলের গভীরে নিরাপদ জায়গায় চলে যান।
পাকিস্তানি সৈন্যরা আগের রাতের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বাহাদুরপুর, কলাগাছিয়া ও চৌহদ্দি গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এতে অনেকে হতাহত হন। হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে অসংখ্য বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এদিন পাকিস্তানি সেনারা বাহাদুরপুর গ্রামের শিকারী বাড়িতে ৫০ জনকে হত্যা করে। কলাগাছিয়া গ্রামে অনেকে হত্যার শিকার হন। পার্শ্ববর্তী চৌহদ্দি গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে বুড়িমার গাছখোলায় তারা অনেককে হত্যা করে।
বাহাদুরপুর, কলাগাছিয়া ও চৌহদ্দি গ্রামে যারা গণহত্যার শিকার হন, তাদের অনেকের পরিচয় জানা যায়নি। বাহাদুরপুর গ্রামের শহীদদের মধ্যে ২৭ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন— রাজ্যেশ্বর ভক্ত, নীলকণ্ঠ ভক্ত, অক্ষয় ঘরামি, মুক্তারাম পুইস্তা, রসিক বাড়ৈ, নারায়ণ বাড়ৈ, মরাই মল্লিক, কালিপদ শিকারী, দুর্গাপদ শিকারী, রামপদ শিকারী, রবি শিকারী, ধলু বাড়ৈ, রুহিদাস বৈদ্য, কালু বৈদ্য, সনাতন বাড়ৈ, গুপি সাহা, টেবি বাড়ৈ, কুড়ুলা বাড়ৈ, যোগেশ মালো, চৈতন্য মালো, রবীন্দ্র বেপারী, নরেন গাইন, দীক্ষিত বাড়ৈ, উজ্জালী শিকারী, যজ্ঞেশ্বর বেপারী, কেশব কীর্তনিয়া ও রবি শিকারী। কলাগাছিয়া গ্রামের শহীদদের মধ্যে ২৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- পাচু কুলু, বিল ডাউকা, বুদ্ধি কীর্তনিয়া, পণ্ডিত সরদার, সুভাসিনী বালা, প্রিয় টাকদার, জীবন বিহারী মৈত্র, পরীক্ষিত বাড়ৈ, বুদ্ধিমন্ত বেপারী, অর্জুন মণ্ডল, যোগেন হালদার, ধন্য হালদার, নাক্কু হালদার, হরিদাস ভক্ত, মনোহর হালদার, হরিহর হালদার, মণীন্দ্র হালদার, ফটিক হালদার, লালু বৈরাগী, বলরাম বৈদ্য, ধেনু মণ্ডল, রামকানাই বৈরাগী, ফেদু হাওলাদার ও বেণী মণ্ডল। চৌহদ্দি গ্রামের শহীদরা হলেন- হরিদাস বাড়ৈ, কাণ্ড বৈরাগী, জ্ঞান মাঝি, ষষ্ঠি মাঝি, বিন্দু মাঝি, বিহারী কীর্তনিয়া, দশরথ মণ্ডল, প্রিয় মণ্ডল, হরিপদ ভক্ত, রামনাথ মণ্ডল প্রমুখ। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড