You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক বাহার উদ্দিন রেজা - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক বাহার উদ্দিন রেজা

বাহার উদ্দিন রেজা, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) স্কুলের ছাত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন চিওড়া ইউনিয়নস্থ নোয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জুড়া মিয়া মাস্টার ও মাতার নাম হাফেজা খাতুন। ৭১-এ বাহার উদ্দিন কুমিল্লা শহরে একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
২৬শে মার্চ সকালে ঢাকায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সংবাদ জানার পর কুমিল্লা শহরের ছাত্র-জনতা মিছিল করলে কিশোর বাহার উদ্দিন তাতে যোগ দেন। ঐ রাতেই পাকবাহিনী কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করলে তিনি দক্ষিণ চর্থা এলাকায় পালিয়ে যান। পরদিন ২৭শে মার্চ ভোরে নিজ গ্রাম নোয়াপুরে গিয়ে সৈয়দ আহমেদ, পেয়ার আহমেদ, সাকী চৌধুরী, পান্না, জাকারিয়া প্রমুখকে নিয়ে তিনি জগন্নাথদিঘি ইপিআর ক্যাম্পের এক অবাঙালি সদস্যকে আটক করেন। ২৮শে মার্চ সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে চৌদ্দগ্রাম আমজাদের বাজার সেতু ও চিওড়া সেতু ধ্বংসে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। ২৯শে মার্চ চৌদ্দগ্রামের আবদুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁরা চৌদ্দগ্রাম থানার অস্ত্র লুট করে তা দিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।
চৌদ্দগ্রামের পতন হলে বাহার উদ্দিন কুমিল্লার বিবিরবাজার হয়ে সোনামুড়া যান। সেখান থেকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ-এর নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক খোরশেদ আলম একটি স্লিপ দিয়ে তাঁকে মতিনগরে ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দারের কাছে পাঠান। তাঁর অধীনে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ২নং সেক্টরে যোগদান করেন। বাহার উদ্দিন এপ্রিলের শেষদিকে বিবিরবাজারে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আকবর হোসেনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। সেক্টর কমান্ডার হায়দারের নির্দেশে বাহারসহ জামাল, খোকন, তাহের ও সাকী কুমিল্লা শহরের আটটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালান। ছাতিপট্টিতে বোমা হামলা চালাতে গিয়ে বোমার স্প্লিন্টারে তিনি আহত হন। এতে তাঁর বাঁ হাতের আঙ্গুলসহ পায়ে ও শরীরে আঘাত লাগে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে ত্রিপুরার জিবি হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী – মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ত্রিপুরায় আসেন। তিনি পঙ্গু ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে জিবি হাসপাতালেও যান। সেখানে ‘জয় বাংলা’ ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে ইন্দিরা গান্ধী কিশোর বাহারকে দেখে অভিভূত হয়ে তাঁর প্রশংসা করে সুচিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাহার উদ্দিন রেজা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নাজমা বেগম। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড