বালিয়াহালট যুদ্ধ (পাবনা সদর)
বালিয়াহালট যুদ্ধ (পাবনা সদর) সংঘটিত হয় ২৮শে মার্চ। পাবনা শহরের উপকণ্ঠে বালিয়াহালট ওয়াপদা ভবনে আশ্রয় নেয়া পাকহানাদার বাহিনীর কিছুসংখ্যক সেনাসদস্যকে জনতা ২৮শে মার্চ দিনভর ঘেরাও করে রাখে। একই সঙ্গে চলতে থাকে গুলি বিনিময়। এক পর্যায়ে পাকসেনারা সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে প্রতিরোধকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। গোলাগুলি ফুরিয়ে গেলে ২৯শে মার্চ খুব ভোরে বিসিকের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাকহানাদাররা জনতার হাতে ধরা পড়ে এবং ৮ জন পাকসেনা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
পাবনা শহরের ৭-৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বালিয়াহালটের ওয়াপদা ভবনে স্থাপিত পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে ৮-১০ জন পাকসেনা ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিল। ২৮শে মার্চ সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ ওয়াপদা ভবন ঘেরাও করতে শুরু করে। বেলা যত বাড়তে থাকে, মানুষের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে এবং গগনবিদারী স্লোগান দিতে দিতে তারা চারদিক থেকে ওয়াপদা ভবনের দিকে এগুতে থাকে। পাকিস্তানি হানাদাররা এত মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়ে জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিকামী জনতাও নিজেদের টু-টু বোর রাইফেল, গাদা বন্দুক, তীর-ধনুক ইত্যাদি দিয়ে পাল্টা জবাব দিতে থাকে। এভাবেই চলে সারাদিন। সন্ধ্যায় জনতার অবরোধ কিছুটা শিথিল হলে হানাদাররা তাদের অবস্থান থেকে বেড়িয়ে গুলিবর্ষণ করে জনতার ব্যূহ ভেঙ্গে বালিয়াহালটের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি পাড়ি দিয়ে বিসিক শিল্পনগরীর প্রধান ঘাঁটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু জনতার প্রতিরোধের মুখে তারা বিসিক শিল্পনগরীর পথ ধরতে ব্যর্থ হয়ে পাশের বালিয়াহালট গোরস্থানের ভেতর ঢুকে পড়ে। জনতা গোরস্থানও ঘেরাও করে ফেলে। পাকসেনারা অপর্যাপ্ত গোলাবারুদ দিয়ে গোরস্থানের পাকা কবরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে জনতার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে কোনোরকমে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাতে থাকে। দিনের আলোয় ধরা পড়ার ভয়ে খুব ভোরে তারা গোরস্থান থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে বিসিকের দিকে পালানোর চেষ্টা করতে থাকলে জনতা তাদের ধাওয়া করে। উভয় পক্ষে তুমুল গোলাগুলি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৮ জন পাকসেনা মুক্তিকামী জনতার হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারায়। [মো. হাবিবুল্লাহ্]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড