You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালিয়াদহ যুদ্ধ (তালা, সাতক্ষীরা)

বালিয়াদহ যুদ্ধ (তালা, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১৪ই নভেম্বর। পাকসেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ৬ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ১ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
বালিয়াদহ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রাম। প্রাচীন ঐতিহ্যের কারণে গ্রামটি এলাকায় সুপরিচিত। যুদ্ধের সময় গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। ফলে, এখানে তাঁরা অবাধে চলাফেরা করতে পারতেন। এখানকার মানুষও তাঁদের নানাভাবে সাহায্য করত।
মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানার জন্য রাজাকাররা একদিন তাদের ২ জন সদস্যকে সাধারণ পোশাকে এ গ্রামে পাঠায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা চিনতে পেরে তাদের হত্যা করেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাজাকাররা প্রস্তুতি নেয়। ১৪ই নভেম্বর প্রায় ১৫০ পাকসেনা ও রাজাকার কয়েকটি ট্রাকে করে পাটকেলঘাটা ক্যাম্প থেকে বালিয়াদহ গ্রামের পশ্চিম পাশে বাগমারা গ্রামে আসে। শত্রুপক্ষের এ আগমনবার্তা আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের ইনফরমার অহেদ আলি পার্শ্ববর্তী বাতুয়াডাঙা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছে দেন। ফলে, কমান্ডার মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা তাদের প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- স্বদেশ রায়, আব্দুল খালেক, নওফেল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, আবুল খায়ের, মোজাম্মেল হক, গোবিন্দ প্রমুখ।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে চারটি স্থানে অবস্থান নেন। কমান্ডার মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি গ্রুপ পাটকেলঘাটা-বালিয়াদহ রাস্তার পাশে, স্বদেশ রায়ের নেতৃত্বে সাতজনের একটি গ্রুপ বালিয়াদহ বাজার এলাকায় এবং তৃতীয় একটি গ্রুপ বালিয়াদহ এলাকার একটি সুবিধাজনক স্থানে এম্বুশ করে। চতুর্থ গ্রুপটিকে রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়।
ঘটনার দিন সকাল নয়টার দিকে খবর আসে যে, পাকসেনা ও রাজাকাররা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বালিয়াদহের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তাদের অগ্রভাগে পাকসেনা ও পেছনে রাজাকাররা। তাদের পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য মাহতাব গাজী ও সৈয়দ শেখ নামে দুজন গ্রামবাসীকে জোর করে রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়।
হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্রই কমান্ডার মনোয়ার হোসেন ফায়ার শুরু করেন। ফলে, উভয় পক্ষে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছিল এসএলআর, রাইফেল ও গ্রেনেড। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে কমান্ডার মনোয়ার হোসেন তাঁর দল নিয়ে পশ্চাদপসরণ করেন এবং বালিয়াদহ বিলে গিয়ে অন্য তিন গ্রুপের সঙ্গে মিলিত হন। এই সুযোগে পাকসেনা ও রাজাকাররা বালিয়াদহ বাজারে প্রবেশ করে অধিকাংশ দোকানপাট ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের বহু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তারপর পাটকেলঘাটা ক্যাম্পে চলে যায়। বালিয়াদহ যুদ্ধে ছয়জন রাজাকার নিহত হয়। তারা হলো- লোকমান (চরগ্রাম), তফেজদ্দীন শেখ (গহরপাড়), ইমাম আলি শেখ (গহরপাড়), সিরাজ (কৃষ্ণকাটি), শামসু শেখ (কৃষ্ণকাটি) এবং মজিদ (কানাইদিয়া)। অপরদিকে বালিয়াদহ গ্রামের নাজের আলি নামে একজন সাধারণ লোক গোলাগুলিতে শহীদ হন। [শেখ সিদ্দিকুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!