You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা)

বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অন্যদিকে বহু পাকসেনা নিহত হয়।
বালিয়াডাঙ্গা ভারত সীমান্তের কাছাকাছি একটি গ্রাম। এ অঞ্চলটি ৮নং সেক্টরে অবস্থিত এবং এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। তবে বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শফিকউল্লাহ। যুদ্ধের মধ্যে তিনি আহত হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব পান ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন আহমেদ (এসডিপিও (এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধকালে র্যাংক ‘ক্যাপ্টেন’)। তাঁদের অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পাকবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম দিকে দিশেহারা হয়ে পড়লেও তৎক্ষণাৎ তাঁরা পাল্টা আক্রমণ চালান। পাকবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা আর অর্টিলারি সৈন্যদের গোলার আঘাতে মুক্তিযোদ্ধারা বিপাকে পড়ে যান। তাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন টিকে থাকার জন্য। গেরিলা যোদ্ধারা যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েন। হঠাৎ পাকবাহিনীর গোলার আঘাতে ক্যাপ্টেন শফিকউল্লাহ গুরুতর আহত হন। এ খবর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ মঞ্জুরের কাছে পৌঁছলে তিনি তাৎক্ষণিক মাহবুবউদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়ে বালিয়াডাঙ্গায় প্রেরণ করেন এবং ক্যাপ্টেন শফিকউল্লাহকে চিকিৎসার জন্য হাকিমপুর ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০শে সেপ্টেম্বর নতুন করে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। ইতোমধ্যে পাকবাহিনীর সঙ্গে নতুন সৈন্য এসে যোগ দেয়।
পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্র আর আর্টিলারির গোলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে শুরু করেন। হঠাৎ গোলার আঘাতে মাহবুবউদ্দিনও আহন হন। চার দিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী বহু পাকসেনাকে হত্যা করলেও সম্পূর্ণ বালিয়াডাঙ্গা এলাকা পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে পিছু হটলেও যোগাযোগ বিছিন্নতার কারণে কিছু যোদ্ধা আটকা পড়ে যান এবং তাঁরা প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যান। কিন্তু শেষদিকে তাঁরা খাদ্য ও গুলির অভাবে আর পেরে উঠছিলেন না। পরে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে বন্দি হন। তাঁরা হলেন সুবেদার তাবারক উল্লাহ ও আ. মালেক। তাঁদের পাকবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রেরণ করে। সেখানে তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। মাহবুবউদ্দিন আহত হলেও তাঁর রণকৌশলের কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বাঁচে। বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে পাকবাহিনীর বহু সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর যাঁরা শহীদ হন, তাঁরা হলেন- জাকারিয়া (বৈদ্যপুর), ইমাদুল হক (বাগডাঙ্গা), মুফতি মোহাম্মদ জায়েদ, আব্দুস সাত্তার, ওপি রউফ, ইপিআর-এর সিপাহি লুৎফর রহমান, ল্যান্স নায়েক আবুল হাসেম, ল্যান্স নায়েক শফিক চৌধুরী, হাবিলদার মুনসুর আলী, মুজাহিদ আনসার আলী প্রমুখ। স্বাধীনতার অনেক বছর পর শহীদদের স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। তাতে ৪ জনের নাম আছে। তাঁরা হলেন- জাকারিয়া (বৈদ্যপুর), ইমাদুল (বাগডাঙ্গা), ইপিআর-এর সিপাহি লুৎফর রহমান (বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ও ল্যান্স নায়েক শফিক চৌধুরী (ইপিআর, সিলেট)। বালিয়াডাঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন- ক্যাপ্টেন শফিকউল্লাহ (কুমিল্লা), মাহবুবউদ্দিন আহমেদ (ময়মনসিংহ), কমান্ডার আব্দুল গফফার (বহুড়া), কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন (তুলসীডাঙ্গা), মো. সৈয়দ আলী গাজী (গদখালী), শওকত আলী সানা (বৈদ্যপুর), আবুল হোসেন (কুশোডাঙ্গা), মো. ওয়াজেদ আলী গাজী (বোয়ালিয়া), লুৎফর গাজী (বোয়ালিয়া), আব্দুর রউফ (রামভাদ্রপুর), ইঞ্জিনিয়ার আমীর আলী (শীরামপুর), এ জেড নজরুল ইসলাম (বোয়ালিয়া), আইয়ুব আলী (বোয়ালিয়া), কার্তিক চন্দ্র সরকার (বোয়ালিয়া), রেজাউল হক (বোয়ালিয়া), আব্দুল মাজেদ (বাকসা), আশরাফ আলী (কেড়াগাছী), সুবেদার তাবারক উল্লাহ (বাগেরহাট) প্রমুখ। [মাসুদুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!