বালিয়াডাঙ্গা গণহত্যা (গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী)
বালিয়াডাঙ্গা গণহত্যা (গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী) সংঘটিত হয় ২১শে এপ্রিল। এতে শতাধিক মানুষ হত্যার শিকার হয়। সমগ্র গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
রাজবাড়ী জেলা শহরের পূর্বদিকে পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষে গোয়ালন্দ উপজেলার অবস্থান। উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা এই চারটি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা। আর উজানচর ইউনিয়নের একটি গ্রাম বালিয়াডাঙ্গা। ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে এক নির্মম গণহত্যা সংঘটিত করে। ঢাকা থেকে আরিচাঘাট হয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পাকবাহিনী যাতে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় মুক্তিকামী জনসাধারণ ২৬শে মার্চ থেকেই গোয়ালন্দঘাটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী প্রতিরোধ ভেঙ্গে গোয়ালন্দঘাট দখলে নেয়। ইতঃপূর্বে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামটি নিরাপদ ভেবে পাকবাহিনীর ভয়ে পালিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এসে অনেক মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিল। ২১শে এপ্রিল গোয়ালন্দঘাট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরপরই স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে শতাধিক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া তারা আহম্মেদ মণ্ডলের বাড়িতে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকা ৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিনের গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- জয়নাল ফকির (পিতা আলাউদ্দিন ফকির), কুলসুম বিবি (স্বামী জয়নুদ্দিন ফকির), হামেদ আলী সেখ (পিতা বাহাদুর আলী সেখ), আবেদ আলী সেখ (পিতা বাহাদুর আলী সেখ), মতিজান নেছা (স্বামী বাহাদুর বেপারী), নায়েব আলী বেপারী (পিতা বাহাদুর বেপারী), জিন্দার আলী মৃধা (পিতা বাছের আলী মৃধা ওরফে কাদের মৃধা), কদর আলী মোল্লা (পিতা আরজান মোল্লা), আবদুর করিম মোল্লা (পিতা আরজান মোল্লা), মোলায়েম সরদার (পিতা খুদি সরদার), কানাই শিকদার (পিতা আবদুল গণি শিকদার), মাজু খাতুন (পিতা আহসান উল্লাহ), লালবুড়ি বেগম (স্বামী পল্লীকবি তোফাজ্জেল হোসেন), আবেদ আলী কাজা (পিতা বাবর আলী কাজা), মো. জহির উদ্দিন (পিতা দুখী খান), জয়নুদ্দিন ফকির, বাহেজ পাগলা, কুরান সরকার, জয়নুদ্দিন ফকিরের দুগ্ধপোষ্য শিশু, রেজেক কসাইয়ের স্ত্রী, আহাম্মদ আলী মণ্ডল, আহসান উল্লাহর স্ত্রী, আহসান উল্লাহর তিন মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশু, হামেদ আলী শেখ (উত্তর বালিয়াডাঙ্গা), গহের শেখ, পল্লীকবি তোফাজ্জেল হোসেন ও তার কন্যা, কাজাই শেখ (রেল কলোনি), আফজাল ও তার স্ত্রী ও শিশু কন্যা, ছবেদ মণ্ডল ও তাইজুদ্দিন। এদিন পাকবাহিনী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড