You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালিয়াকান্দি থানা অপারেশন (রাজবাড়ী)

বালিয়াকান্দি থানা অপারেশন (রাজবাড়ী) পরিচালিত হয় ২২শে সেপ্টেম্বর মো. জালাল উদ্দিন ঘিনের নেতৃত্বে। তখন একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে, অন্যদিকে তেমনি দেশ প্রবল বন্যায় আক্রান্ত। অত্র অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক গোপন বৈঠকে বালিয়াকান্দি থানা অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়। ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাবিলদার মো. জলাল উদ্দিন ঘিনে (আড়কান্দি), শেখ আব্দুল আজিজ (খোৰ্দ্দম্যাকচামী), শেখ নজরুল ইসলাম ও সোহরাব হোসেন। থানা অপারেশনের সংবাদ ফরিদপুর-যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপকে জানিয়ে দেয়া হয়।
অপারেশনের জন্য একটি যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়। এর প্রধান হন মো. জালাল উদ্দিন ঘিনে। এছাড়া আরো যাঁরা বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা হলেন- ডুমাইন গ্রামের সোহরাব হোসেন, শেখ নজরুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, মফিজুর রহমান, আলতাফ হেসেন, জামালপুরের হারুন- অর-রশিদ, রেজাউল ইসলাম, গোয়ালন্দের আহম্মদ আলী, কার্তিক চন্দ্র পাল, ম্যাকচামীর আব্দুল আজিজ, বালিয়াকান্দি থানার বকসির ছেলে সেন্টু (ময়মনসিংহ), থানায় ইপিএডিসি-তে কর্মরত হুদা, বালিয়াকান্দি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আকমল হোসেন (ইলিশকোল), শ্রীপুর বাহিনী-র অধিনায়ক আকবর হোসেনের কমান্ডিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম (ইপিআর), কমান্ডার শেখ রোস্তম আলী (শোলাবাড়ীয়া) এবং ডেপুটি কমান্ডার খোরশেদ আলী মণ্ডল (মধুপুর)। এঁদের নেতৃত্বে শ্রীপুর ও বালিয়াকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা এবং কালুখালি অঞ্চলের কমান্ডার হোসেন আলীর গ্রুপ যৌথভাবে অপারেশনে অংশ নেয়।
২১শে সেপ্টেম্বর রাত এগারোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা স্ব-স্ব স্থানে চলে যান। তাঁরা চন্দনা নদীর পূর্বপাড়ের বালিয়াকান্দি কলেজ এলাকা, থানার দক্ষিণে পোস্ট অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, সেনিটারি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পশ্চিমে প্রফেসর হাসেম আলীর এলাকা, আরব আলী মিয়া ও কোরবান আলী মিয়ার বাড়ি, উত্তরে খাঁ পাড়া ও চন্দনা নদীর পশ্চিম পাড়, থানার উত্তরে আছিরুল খাঁর বাড়ি প্রভৃতি স্থানে অবস্থান নেন। এরপর তাঁরা নির্ধারিত সময়ে থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। অপারেশনের সুবিধার্থে প্রথমেই থানা এলাকার সড়কবাতিগুলো অকেজো করে দেয়া হয়। তারপর ২২শে সেপ্টেম্বর রাত ১টার দিকে চারদিক থেকে একযোগে আক্রমণ করা হয়। চন্দনা নদীর পূর্বপাড় থেকে প্রথম আক্রমণ হয়। এরপর থানার দক্ষিণ দিকে পোস্ট অফিসের কাছ থেকে গ্রনেড নিক্ষেপ করেন খায়রুল বাসার বাচ্চু। পশ্চিম দিক থেকে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মোশাররফ হোসেনের বাড়ির ভেতর দিয়ে এসে বটগাছের আড়ালে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ করেন। থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা আকস্মিক এ আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্রলিং করে পোস্ট অফিস ও মেছোবাজারস্থ একটি পাকা ঘরের পেছনে গিয়ে অবস্থান নেন এবং দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলি চালান। থানার অবাঙালি পুলিশ আব্দুল ওয়াহেদ খাঁর এক ছেলে গুলিতে নিহত হয়। অপর এক ছেলে সামাদ খাঁ থানার মূল ভবনের ছাদ থেকে গুলি করছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তখন সে-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন এবং এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ ওয়াহেদ খাঁকে বন্দি করেন।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে থানার পুলিশ ও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার কমান্ডার আক্কেল আলী (বালিয়াকান্দি), অবাঙালি পুলিশ আব্দুল ওয়াহেদ খাঁ, তার ছেলে আব্দুস সামাদ খাঁ এবং তার স্ত্রী আবয়েদাকে ধরে ঢোলজানি ক্যাম্পে নিয়ে যান। থানার ওসি মাহবুবর রহমান এবং সেকেন্ড অফিসার মহিউদ্দিন কয়েকজন পুলিশসহ আত্মসমর্পণ করে। এভাবে সেদিন বালিয়াকান্দি থানা শত্রুমুক্ত হয়। ভোর হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে চারদিক থেকে জনতার ঢল নামে। তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে-দিতে থানা এলাকায় এসে জড়ো হয়। [এম ইকরামুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!