You dont have javascript enabled! Please enable it!

বারাত যুদ্ধ (তালা, সাতক্ষীরা)

বারাত যুদ্ধ (তালা, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ৩রা অক্টোবর। সাতক্ষীরা জেলাধীন তালা উপজেলার বারাত গ্রামে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ৩-৪ জন রাজাকার নিহত হয়। বারাত গ্রামটি তালা সদর থেকে আনুমানিক ৫-৬ কিলোমিটার এবং সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের মির্জাপুর বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গ্রামের পূর্বদিকে কাজিডাঙা, পশ্চিমে মির্জাপুর বাজার ও মনোহরপুর, উত্তরে মির্জাপুর বিল ও নোয়াপাড়া গ্রাম এবং দক্ষিণে ইসলামকাটি গ্রাম।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কমান্ডার আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বারাত গ্রামের একটি খালি বাড়িতে এসে অস্থায়ী ক্যাম্প করেন। তারপর তারা গ্রামের কয়েকটি স্থানে বাঙ্কার তৈরি করে পাহারার ব্যবস্থা করেন, যাতে পাকসেনা ও রাজাকাররা গ্রামে ঢুকলে তাদের প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু কয়েকজন পাকিস্তানি দালাল মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের কথা পাটকেলঘাটা রাজাকার ক্যাম্পে জানিয়ে দেয়।
৩রা অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা গোয়েন্দা মারফত জানতে পারেন যে, পাটকেলঘাটা থেকে একদল পাকসেনা ও রাজাকার পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর বাজারে এসে দু-দলে বিভক্ত হয়ে বারাত গ্রামের দিকে আসছে। খবরটি নিশ্চিত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে নীহাররঞ্জন পাল নামক একজনকে মির্জাপুর বাজারে পাঠানো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। এদিকে কমান্ডার আব্দুস সোবহান মুক্তিযোদ্ধাদের তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি স্থানে পজিশন নিয়ে থাকতে নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এসএমজি, স্টেনগান, এসএলআর, ৩০৩ রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড ছিল। বেলা দশটার দিকে এম্বুশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পান যে, বারাত গ্রামের ষষ্টিতলা নামক স্থানে পাকসেনা ও রাজাকাররা নীহাররঞ্জন পালকে বেঁধে নিয়ে এগিয়ে আসছে। তারা রেঞ্জের মধ্যে আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। তাঁদের ব্যাপক গুলিবর্ষণে হতচকিত হয়ে রাজাকাররা নীহাররঞ্জন পালকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে যায় এবং ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পাকসেনারা তাদের পেছনে পাকা রাস্তা থেকে গুলি করতে থাকে। থেমে-থেমে এ-যুদ্ধ বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে। এতে ৩-৪ জন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকি রাজাকার ও পাকসেনারা পাটকেলঘাটা ক্যাম্পে ফিরে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা বারাত গ্রামের ক্যাম্প ছেড়ে কিছু দূরে মাদরা গ্রামে গিয়ে অবস্থান নেন। এর কয়েকদিন পর রাজাকার ও পাকসেনারা এসে ষষ্টিতলার আশপাশের সকল হিন্দুবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীকালে ষষ্টিতলায় সংঘটিত এ-যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামসহ সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। [শেখ সিদ্দিকুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!