বার্মা ইস্টার্ন অয়েল কোম্পানি অপারেশন (নারায়ণগঞ্জ সদর)
বার্মা ইস্টার্ন অয়েল ডিপো গণহত্যা ও বধ্যভূমি (নারায়ণগঞ্জ সদর) নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে বহু মানুষকে হত্যা করে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইলে বার্মা ইস্টার্ন অয়েল ডিপোর সুপারের বাংলোতে ২৮শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধকালে এ ক্যাম্পকে তারা বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এখানে বহু সংখ্যক মানুষকে তারা হত্যা করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরপরাধ লোকদের ধরে এনে বার্মা ইস্টার্নের একটি ঘরে আটকে রাখত। নারীদের ওপর তারা পাশবিক নির্যাতন চালাত। নির্যাতনের পর তাদের বার্মা ইস্টার্ন অয়েল ডিপোর শীতলক্ষ্যার পাড়ের জেটিতে হত্যা করত। প্রতিদিন ৮-১০ জন মানুষ এখানে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার শিকার হতো। হত্যাকাণ্ডের পর সুইপার দিয়ে শহীদদের লাশগুলো তারা নদীতে ফেলে দিত।
৮ই এপ্রিল বন্দরের লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসের ১নং স্টাফ কোয়ার্টার্স থেকে ২১ জন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বার্মা ইস্টার্ন জেটিতে ধরে এনে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে। -রাজাকার সাইদুল মাতবর ও ইয়াকুব খানের সহায়তায় তাদের ধরে আনা হয়। নিহতদের লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিলে স্রোতের টানে আবার লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসের ঘাটের সামনে এসে ভেড়ে। এসব শহীদের মধ্যে ছিলেন কটন মিলসের ম্যানেজার বিশ্বনাথ পাল, কেরানি রমাকান্ত দাস, কম্পাউন্ডার অরুণ চন্দ্র আইচ, টাইপিস্ট দীনেশ দাস, শ্রমিক দিলীপ দাস, কেরানি গীরিন বসাক, পিয়ন যোগেশ দাস, পারচেজ এসিস্ট্যান্ট চিন্তাহরণ দে, অফিস সহকারী বঙ্কিম বিহারী রায়চৌধুরী, কেরানি গোপাল দে, শ্রমিক কালীপদ সিং, সতীশ দে, আশারঞ্জন শীল, পুণ্য চন্দ্র দত্ত, ছাত্র প্রাণেশ দত্ত, উদীচী কর্মী খোকন মিঞা, ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল, মো. মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ। ৯ই এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ১২ জন ব্যক্তিকে এখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে। এ সব শহীদদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের ছাত্র অমিত সেন। ৭ই মে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে ৫ জনকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে এনে বার্মা ইস্টার্নের জেটিতে হত্যা করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, পাট ব্যবসায়ী গৌর গোপাল সাহা, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের একজন প্রহরী ও একজন রাখাল। পাকিস্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে নিয়ে আসা লোকজনদের বার্মা ইস্টার্ন অয়েল ডিপোতে এনে নির্যাতন শেষে ৮-১০ জনকে এক সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে আর চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে জেটিতে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করত। সুইপারদের দ্বারা এসব লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়ার পাশাপাশি কিছু লাশ নদীর পাড়ে মাটিচাপা দেয়া হয়। [রীতা ভৌমিক ও শরীফ রেজা মাহমুদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড