You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালাবাড়ি রেলস্টেশন বধ্যভূমি ও গণকবর (চিলমারী, কুড়িগ্রাম)

বালাবাড়ি রেলস্টেশন বধ্যভূমি ও গণকবর (চিলমারী, কুড়িগ্রাম) কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদাররা এখানে বহু মানুষকে হত্যা করে। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি রেলস্টেশনে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন হিসেবে বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। এখানে অনেক মানুষকে হত্যার পর গণকবর দেয়া হয়। বালাবাড়ি রেলস্টেশন ও বালাবাড়ি রেলওয়ে ব্রিজ বেশ কাছাকাছি। এ দুই জায়গায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প ছিল। তাদের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় -রাজাকার ও ইপিক্যাপ বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যও সেখানে থাকত। রেলপথে চিলমারী নদী বন্দরে পৌঁছানোর আগের স্টপেজ বালাবাড়ি রেলস্টেশন। রেল যোগাযোগ থাকায় এখানে পাকিস্তানিদের সামরিক রসদের মজুদ থাকত। আশপাশের ক্যাম্পগুলোতে রসদের ঘাটতি পড়লে এখান থেকে তা সরবরাহ করা হতো। এজন্য পাকিস্তানিদের জন্য বালাবাড়ি রেলস্টেশনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
স্থানীয় রাজাকাররা এখানকার দুই ক্যাম্পে নারী সরবরাহ করত। এসব হতভাগ্য নারীর অনেককে হত্যার পর রেলস্টেশনের পাশে পুঁতে রাখত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত বিভিন্ন আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে পাকসেনারা আশপাশের গ্রাম থেকে অনেক যুবককে ধরে এনে নির্যাতনের পর এখানে হত্যা করত। পথচারীদেরও ধরে এনে এসব ক্যাম্পে হত্যা করা হতো। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা রেলস্টেশনের নিকটবর্তী হাটিথানার হাজী কেফাজ উদ্দিন (পিতা জসিমুদ্দিন মণ্ডল), নেজাবুদ্দিন (পিতা রহিমুদ্দিন), বেলাল (পিতা আছর উদ্দিন), ছাত্তার মুন্সী (পিতা বাছর উদ্দিন), রহিমুদ্দিন (পিতা হাজী বজদ্দিন) ও তার স্ত্রী (ঘরের ভেতরে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়), ইসমাইল (পিতা পনির উদ্দিন), আব্বাস বাছারী খলিফা (পিতা ঢুলি মামুদ), দুখী সেখ (পিতা সোনাউল্ল্যাহ), শুকারু সেখ (পিতা কদরা মামুদ), হেফাজ উদ্দিন (পিতা আফান উদ্দিন), কলিমুদ্দিন মণ্ডল (পিতা দতিব উদ্দিন), শামসুন্নাহার (পিতা হাজী কেফাজ উদ্দিন), বছিরন বেওয়া (স্বামী মোন্নাফ) ও কছমের স্ত্রীকে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করে। কাজলডাঙ্গা ফকিরের হাটের ফয়েজার (পিতা নেজাতুল্যাহ), রব্বানী (পিতা নেফুজা দেওয়ানী) এবং স্থানীয় কাচুয়া ও কুদ্দুছ রাজাকার আজিত ফরিয়ার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পূর্ব মুদাফ গ্রামের হোসেন আলী (পিতা আরিফ উল্লা), জহরালি গ্রামের অজবালিকে গুলি করে এবং গাদলুর স্ত্রীকে পাকিস্তানি নরপিচাশরা ঘরের মধ্যে পুড়িয়ে হত্যা করে। এছাড়া পাকসেনা ও রাজাকাররা কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যার পর বালাবাড়ি রেলস্টেশন গণকবরে পুঁতে রাখত। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!