You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.12 | বালার খাইল গণহত্যা (রংপুর সদর উপজেলা) - সংগ্রামের নোটবুক

বালার খাইল গণহত্যা (রংপুর সদর উপজেলা)

বালার খাইল গণহত্যা (রংপুর সদর উপজেলা) সংঘটিত হয় ১২ই এপ্রিল। সৈয়দপুর শহর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে বহুসংখ্যক লোককে ধরে এনে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ডা. জিকরুল হকসহ প্রভাবশালী ও সুপরিচিত ১৪ জনের নাম জানা গেছে।
রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের বালার খাইল নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড বালার খাইল গণহত্যা নামে পরিচিত। বালার খাইল জায়গাটি তখন জলমগ্ন ডোবা ছিল। এখানে সৈয়দপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে যারা কেবল প্রভাবশালী ও সুপরিচিত এমন ১৪ জনের নাম জানা গেছে।
২৩শে মার্চ রাতে সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাকসেনা ও সৈয়দপুরে বসবাসরত অবাঙালিদের একটি দল শহরের বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা এদিন বাঙালিদের বাড়িঘরে ব্যাপক লুটপাট, ধরপাকড় ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়। শহরের বাঙালি ও অবাঙালিদের সম্পর্কে অবিশ্বাস ও বিভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। আতঙ্কগ্রস্ত বাঙালিদের অনেকে শহর ছেড়ে পালাতে থাকে। ২৬শে মার্চ সৈয়দপুরের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। সেদিন ডা. জিকরুল হক, দানবীর তুলশীরাম আগরওয়ালা, ডা. ইয়াকুব আলী, রামেশ্বরলাল আগরওয়ালাসহ শতাধিক ব্যক্তি গ্রেফতার হন। ডা. জিকরুল হকসহ অনেককে সৈয়দপুর ক্যান্টমেন্টে টানা ১৭ দিন অমানবিক নির্যাতন করা হয়। কিন্তু পাকসেনারা তাঁদের কাছ থেকে কোনোরকম স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়। ১২ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা সৈয়দপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ ট্রাক ভর্তি শতাধিক বাঙালিকে ধরে আনে। ২৬শে মার্চ রংপুর শহর থেকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের এবং ১২ই এপ্রিল গ্রেফতার করা সকলকে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা বালার খাইলে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। সেদিন এখানে নিহত ১৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন- ডা. বদিউজ্জামান (নতুন বাবুপাড়া), ডা. জিকরুল হক (নতুন বাবুপাড়া), ডা. শামসুল হক (নিয়ামতপুর), ডা. এস এম ইয়াকুব (পুরাতন বাবুপাড়া), তুলশীরাম আগরওয়ালা (মারোয়াড়ী পট্টি), লেখরাম আগরওয়ালা (মারোয়াড়ী পট্টি), রামেশ্বরলাল আগরওয়ালা (মারোয়াড়ী পট্টি), ফুলচাঁদ কেডিয়া (মারোয়াড়ী পট্টি), হরিরাম সিংহানিয়া (মারোয়াড়ী পট্টি), যমুনা প্রসাদ কেডিয়া (মারোয়াড়ী পট্টি), জহুরুল হক (নতুন বাবুপাড়া), বেনারসি লাল গুপ্ত (নতুন বাবুপাড়া), নান্নু মিয়া (ঠিকাদার) ও আয়েজ উদ্দিন (রেল কর্মকর্তা, সৈয়দপুর রেলওয়ে, সৈয়দপুর)। [গীতিময় রায়]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড