You dont have javascript enabled! Please enable it!

বামুন্দি প্রাইমারি স্কুল বধ্যভূমি (গাংনী, মেহেরপুর)

বামুন্দি প্রাইমারি স্কুল বধ্যভূমি (গাংনী, মেহেরপুর) মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়।
স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বামুন্দির খ্যাতি ছিল। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় বামুন্দির অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বামুন্দির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী মে মাসের শুরুতে এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকবাহিনীর এ ক্যাম্পই ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র। এক সময় এটি পাকবাহিনীর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। মহাসড়কের উত্তর দিকে ফাঁকা নির্জন জায়গায় অবস্থিত এ প্রাইমারি স্কুলের পেছনে ছিল বিস্তীর্ণ জঙ্গলাকীর্ণ নিচু এলাকা এবং দুপাশে ছিল বড়বড় গর্ত। পাকিস্তানি সৈন্যরা বামুন্দি সেনাক্যাম্প থেকে অর্ধ কিলোমিটার দূরে নিরিবিলি স্থানে অবস্থিত এ প্রাইমারি স্কুলটিকেই টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে এবং বহু মানুষকে এখানে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী গর্তে মৃতদেহ ফেলে রাখে।
বামুন্দি থেকে উত্তর-পশ্চিমের রাস্তা কাজীপুর এবং তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে চলে গেছে। এ রাস্তা ধরেই দেশত্যাগী শরণার্থীরা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। আবার এই দুর্গম রাস্তা ধরেই মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশ রুখতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বামুন্দি দখল করে এতদঞ্চলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ মজুদ করে বামুন্দিতে শক্তিশালী ক্যাম্প গড়ে তোলে। এ ক্যাম্প থেকে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় প্রতিদিন তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আক্রমণ করে, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকসহ সাধারণ মানুষজন, নারী-গৃহবধূ এবং সন্দেহভাজন যে-কোনো মানুষকে ধরে আনে। এরপর তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং সবশেষে ঠেলে দেয় বামুন্দি প্রাইমারি স্কুল বধ্যভূমিতে।
মে মাসের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বধ্যভূমিতে হানাদার বাহিনী হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে। এখানে কতজন মানুষ শহীদ হয়েছেন তার সংখ্যা এবং তাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর বামুন্দি প্রাইমারি স্কুল বধ্যভূমির পেছনে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে। এ বধ্যভূমিতে এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মারক নির্মাণ করা হয়নি। [রফিকুর রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!