বারুর যুদ্ধ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা)
বারুর যুদ্ধ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ৬ই সেপ্টেম্বর। এতে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ উপজেলার ওপর দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক চলে গেছে, যা দক্ষিণে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা জেলাকে এবং উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেট জেলাকে সংযুক্ত করেছে। অন্যদিকে এ উপজেলাটি থেকে মাত্র ২৮ কিমি দক্ষিণে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট অবস্থিত। এ কারণে এ মহাসড়কটি ব্যবহার করে পাকসেনারা সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় যাতায়াত ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা সড়কে নিয়মিত টহল দিত। এ কারণে দেবীদ্বার উপজেলার গ্রামগুলো যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
দেবীদ্বার উপজেলার একটি গ্রামের নাম বারুর। গ্রামটি ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসার পথে অবস্থিত। দেশকে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বারুর গ্রামের ৮ জন যুবক ভারতের পালাটোনা ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নেন। প্ৰশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তাঁরা বারুর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ৬ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা এ গ্রামে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেয়। পাকসেনাদের আক্রমণ থেকে গ্রামটিকে রক্ষা করার জন্য এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা দল বারুর গ্রামের প্রবেশ পথে এম্বুশ করেন। স্থানীয় রাজাকাররা এ ঘটনা জানতে পেরে পাকসেনাদের খবর দেয়৷ পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো দলটিকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা অত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে পাকসেনারা তাঁদের বন্দি করে। পরবর্তীতে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে একটি গর্ত খনন করায় এবং ঐ গর্তের পাশে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাই শহীদ হন। তাঁরা হলেন- জয়নাল আবেদীন, বাচ্চু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, আলী মিয়া, আ. সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেন ও সামাদ মোল্লা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বারুর গ্রামের কবরে সমাহিত করা হয়। দেশের জন্য তাঁদের এই আত্মোৎসর্গের খবর তখন বেতারসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। দেবীদ্বার উপজেলা সদরস্থ নিউ মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে বারুর গ্রামের এই বীর শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড