You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.19 | বানীগ্রাম গণহত্যা (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

বানীগ্রাম গণহত্যা (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম)

বানীগ্রাম গণহত্যা (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১৯শে মে। এতে ২২ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে বাঁশখালীর মানুষ নিজ-নিজ এলাকায় চলে যেতে থাকে। পার্শ্ববর্তী এলাকার শতশত মানুষও নিরাপদ ভেবে বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ-সময় অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ও অচ্যুতানন্দ পুরী মহারাজের বন্ধু, শিষ্য, সেবক ও তাদের পরিচিত জনরা জানমাল রক্ষার জন্য বাণীগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ কারণে হিন্দু অধ্যুষিত বানীগ্রাম হানাদারদের টার্গেটে পরিণত হয়। ১৯শে মে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের সমর্থক শতাধিক রাজাকারআলবদরসহ বাঁশখালী প্রবেশ করে। তারা রাস্তার দুপাশে বানীগ্রাম থেকে জলদী পর্যন্ত গ্রামগুলোতে আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে বানীগ্রামের ২২ জন মানুষকে হত্যা করে। এ-সময় আরো বহুসংখ্যক মানুষ আহত হয়৷ তারা বানীগ্রাম থেকে জলদী পর্যন্ত সহস্রাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বানীগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দালান ও প্রাচীন জমিদার বাড়িসহ মন্দির ধ্বংস করে। তারা হত্যার জন্য বানীগ্রামের জমিদার ও শিক্ষানুরাগী সুশীল চন্দ্র রায় (পেলু বাবু)-কে খুঁজতে থাকে। রাজাকার ও আলবদররা ধন-সম্পদ লুণ্ঠন, গরু-ছাগল, হাঁস- মুরগি ও মূল্যবান আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। কয়েকজন নারী তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।
হানাদাররা বানীগ্রামের কয়েকজনকে পুকুরের ঘাটে ধরে এনে গুলি করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। পাকবাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অপমানে আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে শহীদ হন বানীগ্রামের রমা পাল। গণহত্যার পর ঐদিন সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনী বাঁশখালী ত্যাগ করে। স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতায় বানীগ্রামে শহীদ ১৮ জনকে রাতের অন্ধকারে বানীগ্রামের ক্ষীরোদ চন্দ্র দাশের পুকুরপাড়ে গণকবরে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে শহীদদের স্মরণে বানীগ্রাম গণকবরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। বানীগ্রামে শহীদ ২২ জনের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- বানীগ্রামের হরিরঞ্জন ভট্টাচার্য (পিতা সতীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য), হরিচরণ দে (পিতা রামেশ্বর দে), রাধিকা ঘোষ (পিতা রাম হরি ঘোষ), অটল বিহারী পাল (পিতা কৃষ্ণ চরণ পাল), রমা রানী পাল (স্বামী সাধন চন্দ্ৰ পাল), আশুতোষ দাশ গুপ্ত (পিতা দীনেশ দাশ গুপ্ত), বিনোদ বিহারী চৌধুরী (পিতা ষষ্ঠী চরণ চৌধুরী), সুশান্ত মোহন চৌধুরী (পিতা বিনোদ বিহারী চৌধুরী), সুধাংশু মোহন চৌধুরী (পিতা বিনোদ বিহারী চৌধুরী), ক্ষিতীশ চন্দ্র দে (পিতা ক্ষীরোদ চন্দ্র দে), অমৃত রঞ্জন দে (পিতা অতুল রঞ্জন দে), অমূল্য রঞ্জন দে (পিতা মৃত্যুঞ্জয় দে), বিভূতি রঞ্জন চৌধুরী (পিতা হরিদাস চৌধুরী), হরিপদ তালুকদার (পিতা গিরিশ চন্দ্র তালুকদার), ব্রজেন্দ্র লাল দে (পিতা হরিরাম দে), শিব শংকর দাশ (পিতা গৌর চন্দ্র দাশ), সচ্চিলা রঞ্জন চৌধুরী (পিতা গিরিশ চন্দ্র চৌধুরী) ও শচীন্দ্র দে (পিতা জীবন হরি দে)। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড