You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.18 | বানীযুগী গণহত্যা (চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বানীযুগী গণহত্যা (চিরিরবন্দর, দিনাজপুর)

বানীযুগী গণহত্যা (চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৮ই এপ্রিল। এতে ৩৬ জন সাধারণ গ্রামবাসী শহীদ হন। চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের একটি বধ্যভূমির নাম বানীযুগী। বর্তমান আব্দুলপুর দারুল হাদীস ছালাফিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানার সামনে এর অবস্থান। এ বধ্যভূমিতে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার শিকার শতশত নারী, পুরুষ ও শিশুর লাশও এখানে এনে ফেলা হয়।
বানীযুগী এলাকায় ইছামতি নদীর (ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকে ঐ এলাকায় এ নদীকে বলে মরা নদী) ওপর রেলের একটি ছোট সেতু রয়েছে। সেতুটি ১২নং সেতু হিসেবে পরিচিত। এ সেতু এবং সেতু সংলগ্ন আশপাশের এলাকার পুরোটাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বধ্যভূমি ছিল। সেতু রক্ষায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বানীযুগীতে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পটি পরে নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত হয় এবং এখানে গণহত্যার অনেক ঘটনা ঘটে।
বানীযুগী বধ্যভূমির অধিকাংশ অংশ ডোবা অথবা পুকুর। এর কিছু অংশ নিয়ে ঈদগাহ মাঠ করা হয়েছে। এ বধ্যভূমির দক্ষিণাংশে রেলসেতুর অবস্থান। এরপর বলাইবাজার। উত্তরে নান্দেরাই, ভজুপাড়া, বেলতলী; পূর্বে রেললাইন, মহিষমারী, খয়জাপুর, বালুপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া ; পশ্চিমে নয়াপাড়া, গয়শাপাড়া, চৌধুরীপাড়া ও চিরিরবন্দর রেলস্টেশন। এসব এলাকার লোকজনসহ দগরবাড়ি, হাসিমপুর, বিন্যাকুড়ি, নওখৈর, ফতেজানপুর, আলোকডিহি, ভাবনীপুর, সাহাপাড়া ইত্যাদি এলাকার লোককে বানীযুগীতে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় পাকসেনাদের আগমন ঠেকাতে বানীযুগীর রেলসেতুটি প্রতিরোধযোদ্ধারা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা ১৬ই এপ্রিল পার্বতীপুর থেকে ট্রেনযোগে এসে সেতুটি মেরামত করে চলে যায়। এর একদিন পর ১৮ই এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তারা বিহারি ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে পুনরায় বানীযুগীতে আসে এবং চতুর্দিকের সব পাড়ার বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় দুশতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিন হানাদাররা ৩৬ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে বানীযুগী বধ্যভূমিতে হত্যা করে। পাকিস্তানি সেনারা সেতুর কাছে রেল লাইনের পাশে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পে ১৮-২০ জন হানাদার সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করত। এখানেই পাকসেনাদের হাতে চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষ গণহত্যার শিকার হয়।
বানীযুগী গণহত্যায় শহীদদের কয়েকজন হলেন- আব্দুর রহমান (পিতা গায়েস মাহমুদ, আব্দুলপুর; দিনাজপুর একাডেমি স্কুলের শিক্ষক), তমিজউদ্দিন শাহ (পিতা ফয়েজউদ্দিন শাহ, আব্দুলপুর; চিরিরবন্দর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক), জনৈক জয়নাল আবেদীনের পিতা ও দুই চাচা, মো. শাফাতুল্লাহ (আব্দুলপুর), মো. শবরউদ্দিন (আব্দুলপুর), আব্দুল মান্নান (পিতা ফরমান আলী শাহ, খয়জারপুর), মুন্সী কসিরউদ্দিন (পিতা মফিজউদ্দিন সরকার, মহিষমারী), জমশেদ আলী (পিতা মো. শাহাবুদ্দিন, মহিষমারী), মো. শাফাতুল্লাহ (পিতা মো. শাহাবুদ্দিন, মহিষমারী), মো. শাহাবুদ্দিন (মহিষমারী), মো. সমিরউদ্দিন (পিতা মো. শাহাবুদ্দিন, মহিষমারী) এবং আনোয়ার হোসেন আনার (আব্দুলপুর)। বানীযুগী ও তৎসংলগ্ন এলাকা রাজাকারে ভর্তি ছিল। নান্দেরাই-এর খুতুবুদ্দিন খুতু ও মামুদপুরের আইনউদ্দিন ছিল এ এলাকার বড় রাজাকার। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড