বাদল মাস্টার পাড়া যুদ্ধ (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
বাদল মাস্টার পাড়া যুদ্ধ (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে দুজন পাকসেনা নিহত হয়।
ঘটনার দিন সকালে পটিয়ার জঙ্গলখাইন থেকে সোর্সের মাধ্যমে হাশিমপুরস্থ ক্ষেতিংগা বড়ুয়া পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে যে, চট্টগ্রাম শহর থেকে কুখ্যাত পাকিস্তানি দালাল হামিদুল কবির চৌধুরী ওরফে খোকা (পিতা ফউজুল কবির চৌধুরী)-র নেতৃত্বে দুই ট্রাক পাকসেনা, মিলিশিয়া ও -রাজাকার বরকল সড়ক ধরে বিকেল ৪টার দিকে বাদল মাস্টার পাড়ায় এসে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারীনির্যাতন করবে। এ খবর শোনার পর বিকেল ৪টার পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধারা দুটি দলে ভাগ হয়ে একটি দল কমান্ডার মীর আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাদল মাস্টার পাড়ার পূর্বাংশে আমবাগানে এবং আরেকটি দল আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইছহাক)-এর নেতৃত্বে পশ্চিমাংশে এম্বুশ করে। হানাদাররা বিকেল ৪টার দিকে পাড়ার পশ্চিমাংশে পৌঁছে আক্রমণ শুরু করতে গেলে সেখানে এম্বুশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আবুল বশরের নির্দেশে ফায়ার করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এলএমজি, এসএমজি, এসএলআর প্রভৃতি ভারী অস্ত্র ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তাঁরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করেন। হানাদাররাও প্রাণপণ লড়াই করতে থাকে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর দুজন পাকসেনা নিহত হলে বাকিরা ভীত হয়ে পড়ে। প্রায় দুঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পিছু হটে এবং নিহত দুজন পাকসেনাকে ট্রাকে তুলে নিয়ে পালাতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর কালে রোয়াইঙ্গা পাড়া সংলগ্ন লেম্মুনি খালের পশ্চিম পাড়ে নিহতদের লাশ ফেলে রেখে তারা চলে যায়।
এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন: আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইছহাক, ভাই খলিফাপাড়া, উত্তর হাশিমপুর), আবদুল আলিম (পিতা ওবাইদুর রহমান), সামসুদ্দীন আহমদ (পিতা হোসেন আলী, হাশিমপুর), জয়নাল আবেদীন নিলু (পিতা কাজি ওসমান গণি, জোয়ারা), ফোরক আহমদ (পিতা আবদুর রশিদ, দক্ষিণ জোয়ারা), আছহাব মিয়া (পিতা মতিউর রহমান, মধ্যম চন্দনাইশ), আবুল কালাম আজাদ (পিতা আহমদ হোসেন, হারলা) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড