You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাদারা বাজার যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)

বাদারা বাজার যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৫ই আগস্ট। এতে ৫-৬ জন পাকসেনা নিহত এবং ১৫-১৬ জন রাজাকার আহত হয়।
ঘটনার আগে ২-৩ দিন ধরে জহিরুল হক পাঠান ও বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অবস্থানে স্থান পরিবর্তন করে ডিফেন্সে রাখেন। প্রায় ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ তামান ঠাকুর বাড়িতে এবং আর একটি গ্রুপ পাইকপাড়া ও সোরসাগে অবস্থান নেয়। গল্লাকের বাম পাশে বাদারা, গল্লাক এবং ওয়াপদা রাস্তায় ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা, আর একটি গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা কামতা বাদারা বাজার এরিয়া কভার করে ডিফেন্স নেন। জহিরুল হক পাঠান কামতা ও বাদারা বাজার এবং কলিমউল্যা ভূঁইয়া ওয়াপদা রাস্তায় অবস্থান নেন। চতুর্দিকে অথৈ পানি। জহিরুল হক পাঠান রাতেই গোয়েন্দাদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, পাকবাহিনী হাজীগঞ্জ থেকে মুন্সিরহাট হয়ে রামগঞ্জে আসবে। তবে তারা কতজন এবং কীভাবে আসবে তা জানা ছিল না।
ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে খবর আসে যে, পাকবাহিনী লঞ্চে করে আসছে। তাদের একটি গ্রুপে প্রায় ৭০ জন ওয়াপদা রাস্তা দিয়ে হেঁটে, আর একটি গ্রুপে ৩০-৩৫ জন লঞ্চে করে আসছে। মুক্তিযোদ্ধারা ভোররাত সাড়ে ৫টা থেকে একটানা পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। কামতা ও বাদারা বাজারের গ্রুপ বাড়িতে, রাস্তায় এবং বড়বড় গাছের আড়ালে পজিশনে আছে। হঠাৎ করে সকাল ৭টার দিকে লঞ্চ ও রাস্তা থেকে অনবরত ৩ ইঞ্চি মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তবে বেশির ভাগ গোলা বিস্ফোরিত না হয়ে পানি ও কাদায় ঢুকে যায়। দু-একটি বিস্ফোরিত হলে সেখানে ছোট-ছোট পুকুরের মতো গর্ত হয়ে যায়। মাঝে-মাঝে চাইনিজ রাইফেলের একটানা গুলিবর্ষণ চলে। গোলাগুলো টার্গেটমতো পড়ছে দেখে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগণ বুঝতে পারেন, পাকসেনারা তাঁদের অবস্থান বুঝতে পেরেছে। মর্টার আর গুলির সঙ্গে- সঙ্গে পাকবাহিনী লঞ্চে ও হেঁটে এগিয়ে আসে। এদিকে খুব ভোর থেকে এলাকার জনগণ মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর উপস্থিতি দেখে জীবন বাঁচানোর জন্য নৌকায়, পানিতে সাঁতরিয়ে ও পায়ে হেঁটে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী পাকবাহিনী কামতা ও বাদারা বাজারের কাছে এলেই আক্রমণ করবেন। প্রায় আধঘণ্টা পর পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তের মধ্যে এলে জহিরুল হক পাঠানের নির্দেশে দুদিক থেকে আক্রমণ শুরু হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের উভয় গ্রুপ লঞ্চে ও ওয়াপদা রাস্তায় তীব্র আক্রমণ করে পাকবাহিনীকে হটিয়ে দেয়। এ-যুদ্ধে ৫-৬ জন পাকসেনা নিহত ও ১৫-১৬ জন রাজাকার আহত হয়। পাকবাহিনী জীবন বাঁচানোর জন্য বৃষ্টির মতো গুলি করতে-করতে নিহত সৈনিকদের লাশ নিয়ে হাজিগঞ্জে চলে যায়। পাকবাহিনীকে পালাতে দেখে উৎফুল্ল জনগণ ছুটে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিজয়োল্লাসে যোগ দেয়। [দেলোয়ার হোসেন খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!