বীর প্রতীক বাদশা মিয়া
বাদশা মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৪৮-১৯৭২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালে লক্ষ্মীপুর সদর থানার হাজীরবাজার ইউনিয়নের আলীদাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্বদিকে এ গ্রামের অবস্থান। বাদশা মিয়ার পিতার নাম মফিজ উল্লাহ এবং মাতার নাম আক্তারুন নেছা। তিনি স্থানীয় স্কুলে অধ্যয়ন করেন।
বাদশা মিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। সেনাবাহিনী থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কয়েকটি প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর গঠিত হলে ১০ম ইস্ট বেঙ্গল এ সেক্টরের অন্যতম ব্যাটালিয়ন ছিল। বাদশা মিয়া এ ব্যাটালিয়নে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথমে গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টর এবং পরে রাজনগর সাব-সেক্টরের বিলোনিয়া এলাকায় যুদ্ধ করেন। রাজনগর সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, বীর বিক্রম। বাদশা মিয়া জাফর ইমামের অধীনে বিভিন্ন যুদ্ধ, বিশেষ করে বিলোনিয়া যদ্ধ-এ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
বিলোনিয়া ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। পরশুরাম ও বিলোনিয়ায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ফেনী জেলাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা পরশুরাম ও বিলোনিয়ার পাকসেনাদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুসারে ২রা নভেম্বর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত বিলোনিয়া যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনী পরাজিত হয়। এখানে ২ জন অফিসারসহ ৭২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বাদশা মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪০৭, খেতাবের সনদ নম্বর ১৫৭)।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাদশা মিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে সশস্ত্র উগ্রপন্থীরা আইন- শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়। তারা শ্রেণিশত্রু খতমের নামে হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে সেনাসদস্যদের নিযুক্ত করে। ১৯৭২ সালে রাজশাহী জেলার বাগমারা থানায় দায়িত্ব পালনকালে তথাকথিত ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি’-র সশস্ত্র দলের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে বাদশা মিয়া মারাত্মকভাবে আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে দ্রুত ঢাকায় আনা হয় এবং ১৩ই আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানার বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড