You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাদুড়গাছি গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

বাদুড়গাছি গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় ১৮ই মে। এতে একই পরিবারের ৫ জন শহীদ হন।
বাদুড়গাছি গ্রামটি ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নে অবস্থিত। খুলনার প্রায় সব গণহত্যা সংঘটিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা। কিন্তু বাদুড়গাছি গণহত্যা সংঘটিত হয় নকশালপন্থীদের দ্বারা। উল্লেখ্য যে, সত্তরের দশকের শুরুর দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট বিপ্লব প্রভাবিত নকশালবাড়ি আন্দোলন ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের দ্বারা খুলনা এলাকায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি কৌশল ছিল শ্রেণিশত্রু খতম করা। শ্রেণিশত্রু খতমের নাম করে তখন তারা অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিকে হত্যা করে। বাদুড়গাছি গণহত্যাও চালানো হয়েছিল স্থানীয় একটি নিরপরাধ ধনাঢ্য পরিবারের ওপর।
বাদুড়গাছি গ্রামের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ছিলেন পুলিন সরদার, দয়াল সরদার, বিষ্ণুপদ সরদার প্রমুখ। বাদুড়গাছি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী দু-তিনটি ইউনিয়নের মানুষের কাছে এদের বাড়ি বাদুড়গাছির সরদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। প্রভাবশালী হলেও সরদাররা ছিলেন জনহিতৈষী বাদুড়গাছিসহ পার্শ্ববর্তী বেশকিছু গ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনায় ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হলেও সরদারদের প্রভাবের কারণে বাদুড়গাছি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার হিন্দুরা তখনো ভারতে যায়নিI
১৮ই মে সকালে ৮-১০ জনের একটি সশস্ত্র দল বাদুড়গাছি গ্রামে এসে সরদার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিয়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। নকশালদের আসার খবর দ্রুত বাড়ির ভেতরে পৌঁছে যায়। সরদার বাড়িতে একাধিক লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল। তারা বন্দুক দিয়ে নকশালদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে নকশালরা বাড়ির একজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তিন ভাইকে বেঁধে ফেলে। মহিলারা এ-সময় তাদের যাবতীয় অলংকার ও অর্থাদির বিনিময়ে ধৃত তিন ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চান। তাদের কাকুতি-মিনতিতে কর্ণপাত না করে ঘাতকরা সরদার ভাইদের পার্শ্ববর্তী ঘেংরাইল নদীর তীরে নিয়ে যায়। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর তারা সরদার বাড়ির ধানের গোলা লুট করে। এ গণহত্যায় পুলিন সরদার, দয়াল সরদার, অনন্ত সরদার, বিষ্ণুপদ সরদার ও পদ্মরানি সরদার নিহত হন।
সরদাররা নিহত হওয়ার পর কাছাকাছি ৩-৪ ইউনিয়নে নির্যাতন ও গণলুণ্ঠন শুরু হয়। ফলে এলাকার অধিবাসীরা দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশত্যাগীদের একাংশ এ গণহত্যার মাত্র দুদিন পর ভয়াবহ চুকনগর গণহত্যার শিকার হন। [দিব্যদুতি সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!