বানিয়াচঙ্গ থানা দখল (বানিয়াচঙ্গ, হবিগঞ্জ)
বানিয়াচঙ্গ থানা দখল (বানিয়াচঙ্গ, হবিগঞ্জ) হয় ২০শে অক্টোবর। এতে শত্রুপক্ষের ৩৫ জন সদস্য নিহত হয়। 8 জন পুলিশ ও ৭ জন রাজাকার ধরা পড়ে, বাকিরা পালিয়ে যায়।
অত্র এলাকার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ্গ নিয়ে বৃহত্তর সিলেটের ভাটি অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ থানা। মুক্তিযুদ্ধকালে ৫নং সেক্টরের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন জগৎজ্যোতি দাস, বীর বিক্রম। অসীম সাহসী এ তরুণ মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে পরিচালিত দলটি ভাটি অঞ্চলে দাস পার্টি নামে সমধিক পরিচিত ছিল।
জগৎজ্যোতি দাস পাকসেনাদের থানা ক্যাম্প আক্রমণের দুঃসাহসিক পরিকল্পনা করেন। মাত্র ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি বানিয়াচঙ্গের উদ্দেশে যাত্রা করে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার গোপরাপুর গ্রামে আসেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা নীলকণ্ঠ তালুকদার, ব্রজরাজ তালুকদার, যোগেশ তালুকদার, কৃষ্ণকুমার তালুকদার, জ্যোতিষ তালুকদার, রামলাল তালুকদার, শুকলাল তালুকদার ও সুবল তালুকদার যোগ দিলে দলের সদস্য সংখ্যা দাড়ায় ১৪ জনে। অতঃপর তাঁরা হাওরবেষ্টিত আড়িয়ামুগুর গ্রামে এসে পৌঁছার পর কমান্ডার জগৎজ্যোতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ১০-১৫ দিন সেখানে তাঁদের অবস্থান করতে হয়। এই ফাঁকে দুজন গুপ্তচর নিয়োগ করে দাস পার্টি বানিয়াচঙ্গের নানা তথ্য সংগ্রহ করে। কয়েকদিনের মধ্যে ৪নং সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর মুসলেহ উদ্দীনের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা রমেশচন্দ্র পাণ্ডে ১০ জনের একটি দল নিয়ে আড়িয়ামুগুর গ্রামে এসে জগৎজ্যোতির সঙ্গে মিলিত হন।
বানিয়াচঙ্গ থানা অভিযানের পূর্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দাস পার্টি নদীপথে পাকবাহিনীর একটি গানবোট আক্রমণ করে। গানবোটের মধ্যে থাকা ৪ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই রাজাকারদের হত্যা ও তাদের ৪টি রাইফেল হস্তগত করার পর গানবোটটি নদীতে ডুবিয়ে দেন। এ অভিযানের খবর জানাজানি হওয়ার পূর্বেই জগৎজ্যোতি দাস ২০শে অক্টোবর ভোররাতে বানিয়াচঙ্গ থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন৷ পরিকল্পনামতো মুক্তিযোদ্ধারা থানা এলাকার সমস্ত টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে ছোট-ছোট কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আকস্মিকভাবে চতুর্দিক থেকে থানা আক্রমণ করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে শত্রুসেনারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কোনোরকম প্রতিরোধ না করে তারা থানা থেকে পলায়ন করে। পাল্টা কোনো প্রকার প্রতিরোধের লক্ষণ না দেখে মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করেন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর কৌসুলি আক্রমণে মাত্র ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আড়াইশর মতো রাজাকার, মিলিশিয়া ও পুলিশ সদস্যকে ধরাশায়ী করে স্বল্প সময়ে বানিয়াচঙ্গ থানায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
এ অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি শিকার করতে হয়নি, বরং শত্রুপক্ষের ৩৫ জন সদস্য প্রাণ হারায়। থানার ওসি আলফাজ উদ্দিন আহমদ, সার্কেল অফিসার নজীর আহমদ ও সাব-রেজিস্টার খলিলুর রহমানসহ ৪ জন পুলিশ এবং ৭ জন রাজাকার ধরা পড়ে। এ অভিযানে অনেকগুলো অস্ত্র এবং গোলাবারূদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড