You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.18 | বাটাজোড় হরহর গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল) - সংগ্রামের নোটবুক

বাটাজোড় হরহর গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল)

বাটাজোড় হরহর গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল) সংঘটিত হয় ১৮ই মে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় দেড় শতাধিক গ্রামবাসী শহীদ হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৮ই মে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড় ইউনিয়নের হরহর গ্রামের নন্দীপাড়া ও বাড়ৈপাড়ায় এক বীভৎস গণহত্যা চালায়। হরহর মৌজা বাটাজোড়ের মধ্য দিয়ে নন্দীপাড়া হয়ে পানের বরজ ও জলাভূমি এলাকায় অবস্থিত। হানাদার বাহিনী গৌরনদী অনুপ্রবেশের পর স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বাটাজোড় অশ্বিনী কুমার ইন্সটিটিউশনে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প থেকে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে তারা ১৮ই মে পার্শ্ববর্তী আধুনা গ্রামে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণের খবর পেয়ে নন্দীপাড়া ও বাড়ৈপাড়ার কয়েকশ মানুষ নন্দীপাড়ার (মরারভিটায়) নির্জন জঙ্গল ও জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। আধুনা গ্রাম আক্রমণ শেষে ফেরার পথে খাদেম মিলিটারি, আদম আলী মাস্টার, মানিক রাঢ়ীসহ বাটাজোড় ক্যাম্পের রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে জলাভূমিতে লুকিয়ে থাকা মানুষদের ওপর আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে দেড় শতাধিক গ্রামবাসী শহীদ হন। ৫ মাসের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ কেউই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অভিলাষ নন্দী। সে মা এবং বোনকে হারিয়ে এখনো বেঁচে আছে। ঘটনার পরদিন লাশের স্তূপ থেকে অভিলাষকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণ গণহত্যার এ জায়গার নাম দেয় ‘মরারভিটা’। হরহর মৌজার মরারভিটায় ৩৪ জন শহীদ গ্রামবাসীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- হরহর গ্রামের অশ্বিনী কুমার দাস (৯০) (পিতা কেষ্ট কুমার দাস), যতিন করাতি (৬৫) (পিতা তারিণী করাতি), খোকা মণ্ডল (৫৫) (পিতা রজনী মণ্ডল), রবি গাইন (৫০) (পিতা বিহারী গাইন), বিপিন সিং (৮০), উর্মিলা রানী (৪০) (স্বামী মদন), কানন (৮) (পিতা মদন), ওম (৫ মাস) (পিতা মদন), জ্ঞানদা নন্দী (২৩) (স্বামী মদন মোহন নন্দী), অনিতা নন্দী (৪ মাস) (পিতা মদন মোহন নন্দী), সুধীর গাইন (৪০) (পিতা অশ্বিনী গাইন), মাখন হালদার (৪৫) (পিতা যতিন হালদার), সোনাই হালদার (২৩) (পিতা রতন হালদার), মালতি হালদার (২৮) (স্বামী ভোলানাথ), অর্চনা হালদার (৪ মাস) (পিতা ভোলানাথ), বাসনা রানী (৩০) (স্বামী দুলাল চন্দ্র), সুমন করাতি (১০) (পিতা গোপীনাথ করাতি), সজল করাতি (৭) (পিতা গোপীনাথ করাতি), সরস্বতী হালদার (৩৮), মনোরঞ্জন করাতি (৩৫), যতীন করাতি (৩০), সুমতি গাইন (৬০), সুনদি গাইন (২০), রবীন্দ্রনাথ গাইন (১৫), ধীরেন গাইন (৩৫), ট্যাপা শিয়ালী (১৮), কৃষ্ণকান্ত আচার্য (২৬), নির্মলা রানী নন্দী (৫৫), রমা নন্দী (১০), রাধাকান্ত (৫ মাস), কালু রাজের স্ত্রী, কালু রাজের ছেলে, কালু চাপরাশি (৬১) (বসার) ও ঝন্টু নন্দী বিএ (৫২) (পিতা ধলু নন্দী, বসার)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড