You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.05 | বাড়বকুণ্ডে দালাল উচ্ছেদ অভিযান (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

বাড়বকুণ্ডে দালাল উচ্ছেদ অভিযান (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম)

বাড়বকুণ্ডে দালাল উচ্ছেদ অভিযান (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৫ই নভেম্বর। এতে স্থানীয় শান্তি কমিটি-র প্রধান মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও তার ৮ সহযোগীকে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও তার সহযোগীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এ অভিযান চালাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ মফিজুর রহমান ভূঁইয়ার বড় ছেলে হারুন ভূঁইয়াসহ তার এক জামাতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ইতোমধ্যে মফিজুর রহমান ভূঁইয়াকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ির নারকেল গাছে কে বা কারা একটি চিঠিও ঝুলিয়ে দেয়। মফিজুর রহমান নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে কমিটির কার্যালয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকজন -রাজাকার ও চৌকিদার তাকে রাতভর পাহারা দিত।
মফিজুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে থানা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিনসহ শীর্ষপর্যায়ের ৩০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। ৫ই নভেম্বর রাতে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন নায়েক শফিউল আলম ও নায়েক সুবেদার আবুল মনছুর। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে বাড়বকুণ্ড ইউপি কার্যালয়ের দরজা খুলে দ্রুত মফিজুর রহমানসহ তার ৬ সহযোগীকে আটক করেন এবং তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেন। তার সহযোগীরা হলো- নজির আহাম্মদ, হাফেজ হাফিজ উল্লাহ্ (লক্ষ্মীপুর), মো. রাজ্জাক ওরফে রাজু (পিয়ন), নুর আহাম্মদ মেম্বার, মাহবুবর রহমান এবং অপর একজন। এরপর তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আরো দুই স্বাধীনতাবিরোধী মো. ইসহাক মেম্বার ও জামাল উল্লাহকে নিজ-নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের সমুদ্রের বেড়িবাঁধে জড়ো করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী মনোভাবে অটল থাকায় অবশেষে মফিজুর রহমানকে তার ৮ সহযোগীসহ হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পর মফিজুর রহমানের আর এক সহযোগী আকবর হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দালাল উচ্ছেদ অভিযানে এলাকায় পাকিস্তানি দোসরদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা কিছুটা কমে আসে। থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা থানা মুসলিম লীগ-এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সে স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা বন্ধ রেখে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। [জামশেদ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড