বাড়লা গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)
বাড়লা গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা) সংঘটিত হয় ১২ই নভেম্বর। এতে ৪ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। গণহত্যার পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
বাড়লা গ্রামটি কেন্দুয়া থানা শহর থেকে আনুমানিক ১৬ কিমি দূরে পাইকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। গ্রামের দক্ষিণে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল ও পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার সীমান্ত। কেন্দুয়া থানা সদর থেকে বেশ দূরে ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ গ্রাম মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নিরাপদ বলে মনে হয়। তাই পাইকুড়া ইউনিয়ের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমানের বাড়িতে তাঁরা ক্যাম্প স্থাপন করেন। ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন মো. আব্দুর রহিম (পরে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে এসপি হন)। গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। তাদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় দালালরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাকবাহিনীকে অনুরোধ জানায়। দালালদের সহায়তা ও প্ররোচনায় ১২ই নভেম্বর পাকবাহিনী বাড়লা গ্রামে আক্রমণ করে। নান্দাইল থেকে এসে একদল পাকসেনা এ আক্রমণে অংশ নেয়। আক্রমণের খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। গ্রামে ঢুকেই পাকহানাদাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিতে ৪ জন নিরীহ মানুষ তৎক্ষণাৎ প্রাণ হারান। গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন— জলুহাস উদ্দিন ওরফে জলিল (পিতা আসক আলী ভূঞা), মালধর আলী (পিতা আব্দুল কাদির), আব্দুল খালেক (পিতা সমশের আলী) ও আবুল হাসেম ওরফে মন্তু (পিতা মিঠু মিয়া)। হত্যাকাণ্ডের পর পাকবাহিনী চেয়ারম্যান বাড়িসহ প্রায় দুশ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তারা গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে গ্রামবাসীর অনেক মূল্যবান সম্পদ নিয়ে যায়। [সন্তোষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড